Sunday, October 5, 2008
উল্টো পিঠের গল্প
শুনানির তারিখ দেয়া হল। যথাসময়ে মিঃ সূর্য, মিঃ প্রদীপ ও তাদের পক্ষের আইনজীবীরা হাজির হলেন আদালতে। শুরু হল তর্ক-বিতর্ক। মিঃ প্রদীপের পক্ষের উকিল শুরুতেই তার মক্কেলের বক্তব্য পেশ করলেন জজ সাহেবের নিকট। এখানে বলে রাখা ভাল যে, এ উকিল বাংলাদেশের এক ক্ষুদে উকিল, নাম মোঃ আমিন। অন্যদিকে 'বিশ্ব আলোক সমিতি' মিঃ সূর্যের পক্ষে লড়ার জন্য নিয়োগ করেছে যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারিকৃত ড. স্টিফেন লি - কে।
ড. স্টিফেন লি শুরু করলেন এভাবে - "মিঃ সূর্য একজন মহানুভব, উদার, বিশালাকায়, ঐশ্বর্যশালী, সর্বোপরি আদর্শ ব্যক্তিত্ব।"
আমিন বাধা দিয়ে বলেন, "মহামান্য আদালাত, মিঃ সূর্যকে আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে মানতে রাজি নয় আলোক সমাজ। আর এজন্যইতো এই মামলা। আমার প্রতিপক্ষের উকিলের করা বিশেষণগুলো আপাতত তুলে নেয়ার জন্য আমি আবেদন করছি, মহামান্য আদালত।"
জজঃ আবেদন মঞ্জুর করা হল।
বিশেষণ তুলে নিয়ে এবার ড. স্টিফেন লি সরাসরি তার বক্তব্য শুরু করলেন - "Your Honour, মিঃ সূর্য বিভিন্ন দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। প্রথমতঃ আমরা আসি আকারের দিকে। সূর্যের আকার-আয়তন বিশাল, অন্যদিকে মিঃ প্রদীপের আয়তন নগণ্য।"
আমিনঃ বিজ্ঞ আইনজীবী প্রশ্ন তুললেন আকার নিয়ে, কে কতখানি লম্বা-বেটে তা নিয়ে। কিন্তু উনি কি এই প্রবাদটা জানেন না যে, লম্বা যত, আহাম্মক তত। তাই প্রশ্ন হল, এ বিশাল আকার কি শ্রেষ্ঠত্বের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়?
লিঃ Your honour, আমার প্রতিপক্ষের উকিল পরোক্ষে আমার মক্কেলকে আহাম্মক বলেছেন। অবশ্য শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা অন্যের মন্তব্যের ধার ধারে না। এই আপত্তিকর উপমাও আমার client এর ব্যক্তিত্বকে বিন্দুমাত্র ম্লান করতে পারবে না, Your honour.
জজঃ সম্মানিত আইনজীবীগণ, আপনারা নিজেরাই সবার সামনে একে অপরের নিকট নিজেদের যুক্তি তুলে ধরুন। তাহলে মনে হয় আপনাদের উভয়েরই ভাল হবে।
আমিনঃ ধন্যবাদ, মহামান্য আদালত।
লিঃ মিঃ আমিন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, মিঃ সূর্য কত দূর থেকে আলো দেয়। এত দূর থেকে আলো দেয়ার ক্ষমতা কি আপনার client এর আছে?
[এ সময় মিঃ প্রদীপের মুখখানা কালো হয়ে গেল।]
আমিনঃ দূর থেকে আলো দেয়ার কথা বলছেন, লি সাহেব? দূর থেকে আলো দেয়ার অনেক অসুবিধে। যেমনঃ আকাশে কালো মেঘ জমা হলে সুর্যের আলো হ্রাস পেয়ে যায়। কিন্তু আমার মক্কেলের বেলায় এ বাধা নেই।
[কালো মুখ ফর্সা হয়ে উঠল মিঃ প্রদীপের।]
লিঃ মিঃ সূর্য যে বিশাল পরিমাণ আলো পাঠায় - সে কারণে তাঁর ক্ষমতাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে সম্পুর্ণ আলোক সমাজ।
আমিনঃ মিঃ সূর্যের সব আলো তো আর মানব সভ্যতার কাজে লাগে না, বেশিরভাগই অপচয় হয়। আর অপচয়কারী শয়তানের বন্ধু, মহান আল্লাহতা'লা তাকে ঘৃণা করেন। আর মিঃ প্রদীপের বেলায় দেখুন - তিনি কত মিতব্যয়ী! মিতব্যয়িতা একটা প্রধান গুণ, যার জন্য একে অন্যের শ্রদ্ধাভাজন হতে পারে।
লিঃ আচ্ছা মিঃ আমিন, মিঃ সূর্যের নিয়মানুবর্তিতার কথা ভাবুনতো একবার। উনি পূর্ব দিকে উঠেন, আর পশ্চিমে অস্ত যান। এই বিশাল গুণের কারণে পাঠ্যপুস্তকে Translation পর্যন্ত আছে। আর Discipline কিংবা নিয়মানুবর্তিতা রচনায় তাঁর উদাহরণও দেওয়া হয়। এটা কি একটা বিশাল plus point না?
আমিনঃ দুঃখিত, মিঃ সূর্য খুবই নিয়মানুবর্তী - একথা মানতে রাজি নই আমি। আর তিনি পূর্ব দিকে উঠেন, আর পশ্চিমে অস্ত যান - এ কথাটাও ভুল। লক্ষ্য করলে দেখবেন - উদয় আর অস্ত এ দুই দিকের মধ্যবর্তী কোণটা সবসময় ১৮০ ডিগ্রী হয় না। একথা সূর্য মহাশয় জেনেও প্রতিবাদ করেন না। আমি বুঝতে পারিনা এ কেমন শ্রেষ্ঠত্ব। অন্যদিকে মিঃ প্রদীপকে যখন যেখানে খুশি জ্বালানো হয়, তখন সেখানেই তিনি জ্বলেন। আমি মনে করি- এটাই বড় নিয়মানুবর্তিতা।
লিঃ মিঃ আমিন, আপনি দেখুন, মিঃ সূর্য কত মহানুভব! তিনি নিজের আলো দিয়ে অন্যকে সাহায্য করেন। যেমনঃ চন্দ্র আলোকিত হয় আমার client এর আলোয়।
আমিনঃ হ্যাঁ, আমি মেনে নিলাম - এখানে সূর্য মহাশয় উদারতার পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু এমন কোন মহানুভবতা দেখানোর দরকার নেই যার জন্য অন্যের নৈতিকতা নষ্ট হয়। মিঃ সূর্য চন্দ্রকে যে আলো দেন, তা কি চন্দ্রবাবু কোনদিন ফেরত দিয়েছেন? না দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন? চন্দ্র কি এতে পরনির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছেন না? আর কাউকে পরনির্ভরশীল হতে ইন্ধন যোগানো নিশ্চয়ই কোন ইতিবাচক গুণাবলি হতে পারে না।
লিঃ দেখুন মিঃ আমিন, মিঃ প্রদীপ হতে যখন আগুন লেগে যায়, নষ্ট হয় প্রচুর রাজস্ব, তখন তাকে কি ইতিবাচক গুণ হিসেবে অভিহিত করবেন? মিঃ সূর্যের কিন্তু এমন ইতিবাচক গুণ নেই।
আমিনঃ আগুনের কথা যখন উঠলই, তাহলে বলতে হয়, আগুনের অপকারিতা যেমন আছে, তেমনি উপকারিতাও আছে। দেখুন লি সাহেব, আমাদের সভ্যতার বিকাশ ত্বরান্বিত হয়েছে কিন্তু আগুন হতেই। আর এখনও আগুনের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। অতএব, আগুন আমাদের জ্বালাতেই হবে। সে আগুন সহজেই জ্বালানো যায় আমার মক্কেলের কাছ থেকে, আর মিঃ সূর্যের আলো হতে আগুন জ্বালাতে দরকার হয় দামী কিন্তু বিপজ্জনক ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস। হ্যাঁ, একটা কথা বলতে পারেন, লি সাহেব, আমার মক্কেলের শিখা মাঝে মাঝে ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু মিঃ প্রদীপ এ ক্ষতির জন্য অর্থাৎ আগুন লাগানোর জন্য দায়ী নন, বরং দায়ী তারা, যারা এ শিখা ব্যবহার করেন।
লিঃ আগুন লাগার কথা বাদ দিলেওতো আরো বলা যায়, মিঃ প্রদীপের কারণে ঘরবাড়ি কালো হয়ে যায়, কিছুদিন পরপর বাড়িতে রং-বার্ণিশ করতে হয়। প্রচুর খরচ হয় এতে।
আমিনঃ লি সাহেব, সূর্যের আলোতে হয়তো ঘরবাড়ি কালো হয় না, কিন্তু এই আলোতে চলার কারণে মানুষের গায়ের রঙ কালো হয়ে যায়। এ থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যে কত শত সানপ্সক্রীন, ভ্যানিশিং ক্রীম, টারমারিক ক্রীম, বডি লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করে তার ইয়ত্তা নেই। এতে কি ঘর রঙ করার চেয়ে খুব কম খরচ লাগে?
লিঃ Your honour, আমি এখন মিঃ সূর্যের সবচেয়ে বড় গুণটির কথা বলছি। এটা সকলেই জানেন যে, সুর্যের আলো হতে শক্তি শোষণ করে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে। আর মানুষ উদ্ভিদের ত্যাগ করা অক্সিজেন শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে, Your honour। আপনি, আমি, আমার প্রতিপক্ষের আইনজীবী, আমরা সবাই এর মাধ্যমেই বেঁচে আছি। এ কারণেই মিঃ সূর্যকে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে মানতে কোন বাধা নেই।
আমিনঃ হ্যাঁ, মিঃ সূর্যের এ গুণটা তার একটা ভাল দিক - একথা মানতে আমার কোন বাধা নেই।
[এসময় মুচকি হাসি ফুটে উঠল ড. স্টিফেন লি'র মুখে। মিঃ সূর্যও তার তাপ বাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করে উঠলেন।]
আমিনঃ কিন্তু আমি যে বিষয়টার দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হল - এখানে প্রশ্ন তুলা হয়েছে ষ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে, কেবল একটা গুণ নিয়ে নয়। মিঃ সুর্য ও মিঃ প্রদীপ দুজনেই তাদের স্ব স্ব কাজ করে যাবেন - নিজে শ্রেষ্ঠ হলেও, আবার না হলেও। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল - শ্রেষ্ঠ কে? মিঃ সুর্যের যেমন একটা গুণের কথা বললেন মিঃ লি, আমিও তেমনি মিঃ প্রদীপের অনেক অনেক গুণের কথা বলতে পারি। সূর্যের আলোতে সানগ্লাস পরতে হয়, কিন্তু মিঃ প্রদীপের বেলায় তার দরকার হয় না। মিঃ সূর্যের বিচ্ছুরিত আলোয় বরফ গলে বন্যা হয়ে যায়, জনজীবনে দুঃখ বাড়ে। আবার তার প্রখর আলোয় কোথাওবা সৃষ্টি হয় মরুভূমির। কিন্তু মিঃ প্রদীপ তৈরি করে স্নিগ্ধ, মোলায়েম, মনোরম একটা পরিবেশ। প্রদীপের আলো ব্যবহৃত হয় জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, মানুষকে আনন্দ দানে। আর মিঃ প্রদীপের সবচেয়ে বড় গুণ হল, উনাকে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা পাওয়া যায়, কিন্তু মিঃ সূর্যকে পাওয়া যায় না। আমি আবারো বলছি, মহামান্য আদালত, কোন বিশেষ একটা গুণের কারণে কেউ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার হতে পারেন না। এজন্য প্রয়োজন অনেক গুণের সমষ্টি। আর আমার মক্কেল মিঃ প্রদীপের মাঝে তা আছে। আমার আর কিছু বলার নেই, মহামান্য আদালত। লি সাহেব যদি কিছু বলতে চান, বলতে পারেন।
লিঃ Your honour, আমিন সাহেব নিজ মুখেই সবার সামনে স্বীকার করে গেলেন, মিঃ সূর্যের মহৎ গুণ হল - সূর্যালোক হতে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে, আর উদ্ভিদের কারণেই আমরা বেঁচে আছি। এই বিরাট গুণের কথা উল্লেখ করার পর আমারও কিছু বলার নেই, Your honour।
[রায় জানার জন্য সবাই চুপচাপ হয়ে গেল।]
জজঃ উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্কিই আমরা এতক্ষণ শুনলাম। এগুলোর বিচারে এ আদালত মনে করে- মিঃ প্রদীপ মিঃ সুর্য অপেক্ষা অধিকতর শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। আর মিঃ প্রদীপের এসব গুণ বিবেচনায় না আনায় উনার সম্মানের যে হানি ঘটেছে সে কারণে 'বিশ্ব আলোক সমিতি'কে ১৩ মিলিয়ন ইউ.এস. ডলার জরিমানা করা হল। এ অর্থের ১৭.২৫ ভাগ সরকারকে কর দেয়া হবে এবং বাকি অংশ মিঃ প্রদীপকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করা হবে। আদালত আজকের মতো এখানেই মূলতবি ঘোষণা করা হল।
সূর্যের সামনে মনে হচ্ছে কালো মেঘ জমা হচ্ছে। দিন প্রায় শেষভাগে, রাত প্রায় আসন্ন।
Sunday, August 3, 2008
বন্ধু দিবসের সাতকাহন
আজকে (৩রা আগস্ট, ২০০৮) বিশ্ব বন্ধু দিবস। সবাই হয়তো জানেন, আগস্ট মাসের ১ম রবিবারটাই পালিত হয় বন্ধু দিবস হিসেবে। আচ্ছা, এই দিবসের সংঙ্গাটা একটু অদ্ভুত না? ১লা জানুয়ারী, ২১শে ফেব্রুয়ারির মতো নির্দিষ্ট কোন তারিখ না, বরং আগস্ট মাসের ১ম রবিবার। রবিবার । কেন? কেন মঙ্গল কিংবা বৃহস্পতি বার না? কখনো এই প্রশ্ন আসেনি মনে? আপনার এসেছে কিনা জানিনা, তবে আমার এসেছে। তাইতো গুগলে মেতেছিলাম অনেকটা সময়। শেষ পর্যন্ত যা পেলাম তার সারমর্ম এই-
১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস বন্ধুত্বের গুরুত্ব অনুধাবন করে একটা দিনকে ‘জাতীয় বন্ধু দিবস’ ঘোষণা করে [১]। এর পিছনে কারণ কী ছিল, তা নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হয় - ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর জনমনে যে অবিশ্বাস আর শত্রুতা জন্ম নিয়েছিল তার প্রেক্ষিতেই বন্ধু দিবসের শুরু। লক্ষ্য করুন - ‘জাতীয়’ বন্ধু দিবস, ‘আন্তর্জাতিক’ নয়। তাহলে এটা আন্তর্জাতিক হল কবে? জাতিসংঘের মতো কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও এ ঘোষণা এসেছে বলে কোন তথ্য পাইনি। আসলে যা হয়েছে - যুক্তরাষ্ট্রে এ দিবসের সাফল্য দেখে অন্যান্য দেশও তা পালন করতে থাকে। কালে তা আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করে। তবে এই আন্তর্জাতিক রূপ সার্বজনীন নয়। কিছু দেশ আছে যারা একই দিনে বন্ধু দিবস পালন করেনা। যেমন, দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশে যেখানে ২০শে জুলাই বন্ধু দিবস, সেখানে প্যারাগুয়েতে তা ৩০শে জুলাই [২]। আবার চিলিতে নিয়মটা হল - অক্টোবরের প্রথম শুক্রবার। এদিকে সিঙ্গাপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধু দিবস পালন করা হয় ২য় টার্মের ৩য় কার্যক্ষম শুক্রবার (3rd working Friday)[৩]।
অ! যে কারণে গুগলের আশ্রয় নিয়েছিলাম - তাইতো বলা হল না। কেন রবিবার? আসলে এরও কোন সুনির্দিষ্ট কারণ পাইনি। অগত্যা সাধারণ বুদ্ধি-বিবেচনার আশ্রয় নিতে হল। আমার যা মনে হয় - যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। আর বন্ধু দিবস হিসেবে এমন একটা দিনকে বেছে নেয়া হয়েছে যেদিন সকলে কাজকর্মের চিন্তা দূরে রেখে সবার সাথে নিশ্চিন্তে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারে। আর আমার ভিতরে গন্ডগোলটাও এখানেই। যুক্তরাষ্ট্রের লোক যদি তাদের সুবিধামতো (এবং অবশ্যই যুক্তিসংগত) দিনে বন্ধু দিবস পালন করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারিনা? আর এটা তো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিতও না। তাহলে আমরা কেন আগষ্টের ১ম শুক্রবারকে বন্ধু দিবস বলিনা? আমার ছোট্ট মাথায় এর উত্তর আসে না।
আসলে আমাদের দেশে বন্ধু দিবসের প্রচলন বড় বেশি ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে (আমার মনে হয়)। ব্যবসায়ীদের কাছে আর অনুভূতির দাম কি? শত্রু দিবসে যদি বন্ধু দিবসের চেয়ে বেশি লাভ হত, তাহলে হয়তো তারা তাই করত।
যাকগে, মন খারাপ করে লাভ নেই। বরং এই সুযোগে সকল বন্ধুদের প্রতি ভালবাসা জানাতে পেরে নিজের মনকে খুশি রাখি। ভাল থেকো, বন্ধুরা।
[১] http://www.theholidayspot.com/friendship/history.htm
[২] http://news.deviantart.com/article/53388/
[৩] http://www.ne.edu.sg/core_events.htm
তুমি আমার পাশে বন্ধু হে বসিয়া থাকো
বসিয়া থাকো
একটু বসিয়া থাকো
আমি মেঘের দলে আছি
ঘাসের দলে আছি
তুমিও থাকো বন্ধু হে
একটু বসিয়া থাকো...
রোদের মধ্যে রোদ হয়ে যাই
জলের মধ্যে জল
বুকের মধ্যে বন্ধু একটা
নিশূন্য অঞ্চল
আমি পাতার দলে আছি
ডানার দলে আছি
তুমিও থাকো বন্ধু হে
একটু বসিয়া থাকো...
মেঘের মধ্যে মেঘ হয়ে যাই
ঘাসের মধ্যে ঘাস
বুকের মধ্যে হলুদ একটা
পাতার দীর্ঘশ্বাস।
---------------------------------------
কথা : ধ্রুব এষ
সুর ও কন্ঠ : কনক আদিত্য
বিন্যাস ও যন্ত্রানুষঙ্গ : কার্তিক
Thursday, July 31, 2008
এলোমেলো - ০৪
তীক্ষ্ণ আলোয় পুড়ে
মূর্খ আমি ভাবি - আহ্ কী সুন্দর!
দ্যুতি জ্বলজ্বল করে
Saturday, July 26, 2008
Wednesday, July 16, 2008
মহাগুরুর কবিতা - ১২
চারপাশে ভিড় করে আছে-
প্রত্যাশার ভার,
কর্তব্যের ভার;
ভালবাসার ভার,
নিঃসঙ্গতার ভার;
সফলতার ভার,
হতাশার ভার;
বিবেকের ভার,
মুখোশের ভার;
হয়তো সবই মিছে, সবই ভ্রান্ত
তবু আমি ক্লান্ত, খুব ক্লান্ত।
(লেখক- মহাগুরু)
Tuesday, July 8, 2008
কি সেই দুটি অক্ষর??
তার বেশি বৈ কম নয়
রক্তে অনুপ্রবেশ, প্রতি নিঃশ্বাসে
বাঁচিয়ে রাখে সারাক্ষণ
কেবল দুটি অক্ষর।
(সংগৃহীত)
: অক্ষর দুটি কি হতে পারে? আছে কোন ধারণা? তাহলে যোগ করুন মন্তব্যে...
Wednesday, April 16, 2008
এলোমেলো - ০২
হাঁটছি, খেলছি, ছুটছি
সবই ঠিক আছে ;
তবে পা কিন্তু মচকায়
একটা ভুল পদক্ষেপে ...
Wednesday, April 2, 2008
ভিতরের ভিতর
তার দিকে তাকিয়ে থেকো না,
তাতে ডুব দিয়ে দেখ।
মানুষকে বুঝতে চাও?
বাইরের শীতলতাকেই সব ভেবো না,
হৃদয়ের উষ্ণতা ছুঁয়ে দেখ।
Sunday, March 23, 2008
সম্পর্কের রসায়ন
Saturday, March 15, 2008
সৌরভ ছড়ানো নাম
হাঃ হাঃ হাঃ ... হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে খাদিজা। এই বুঝি পেটে খিল লাগে! হাতে একখানা চিঠি। আর কলিমুল্লাহটা পিছনে পিছনে চেঁচিয়েই যাচ্ছে- ভাবি, ভাল হবে না কিন্তু... ভাইয়াকে বলে দিলে একদম ভাল হবে না কিন্তু...
তার কথাকে পাত্তাই দেয় না খাদিজা। উল্টো গতি পায় উৎসাহ। জানালার পাশে গিয়ে চিঠিটাকে চোখের সামনে ধরে কলিমুল্লাহকে আড়াল করে বলে- আ-হা-হা-হা-হা... এ না-কি প্রে-মে-র ডায়লগ! হাঃ হাঃ হাঃ।
ছোঁ মেরে চিঠিটা কেড়ে নিতে চায় লাজুক কলিমুল্লাহ। পারেনা। ‘ধরা পড়ে গেছি, ধরা পড়ে গেছি’ ভঙ্গিতে বলতে থাকে- ভাবি, এইটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না... একদম ভাল হচ্ছে না...
কিন্তু খাদিজাকে ঠেকায় কে? চিঠি পড়তে শুরু করে। এদিক-সেদিক হেলে-দুলে নাকি সুরে পড়তে শুরু করে। আঁমাকে কঁলিমুল্লাহ বলে ডেকোনা। হাঃ হাঃ হাঃ।
আবার ছোঁ মারে কলিমুল্লাহ। আবারও ব্যর্থ। জানালার দিক থেকে ঘুরে যায় খাদিজা।
-এঁই নামে ডাকলে বুঁড়া-বুঁড়া লাগে। হাঃ হাঃ হাঃ। হৃঁদয় বলে ডেকো। হাঃ হাঃ হাঃ।
দেবর-ভাবির কাহিনী এতক্ষনে ধরতে পেরেছে চেয়ারে বসে বই পড়তে থাকা আব্দুল্লাহ – প্রেমপত্র লিখতে গিয়ে ধরা পড়েছে বেচারা। এতে মজা পায় আব্দুল্লাহও। মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। প্রশ্রয়ের হাসি। একসময় তার নিজেরওতো এমনই মনে হতো! বেচারার আর দোষ কি? আর মনে মনে বকতে থাকে বাবাকে। তার জন্যইতো আজকে এই অবস্থা! কীসব সেকেলে সেকেলে নাম রাখে – সলিমুল্লাহ, আব্দুল্লাহ, কলিমুল্লাহ... যত্ত সব!
আব্দুল্লাহর চিন্তায় ছেদ পড়ে হঠাৎ। কী যেন চকচক করতে দেখে সে। ভাল করে খেয়াল করে। দেখে- খাদিজার চোখ ছলছল করছে। শেষ বিকেলের তির্যক আলো জানালা অতিক্রম করে সে জল ছুঁয়ে গেছে। খুব ভাল লাগে আব্দুল্লাহর। কারণ আর কেউ না জানুক, সে তো জানে- খাদিজা দুঃখে কাঁদে না, পাথর হয়ে থাকে। আবার আনন্দের অশ্রু ধরে রাখতে পারে না কিছুতেই। অনেকদিন পর এ দৃশ্য দেখে ভাল লাগে আব্দুল্লাহর। আবার ভয়ও পায়। তবে কি খাদিজা ভুলে গেছে সেদিনের কাহিনী? নাহ, এমন তো হওয়ার কথা নয়। সেইবার প্রথম যখন তাদের সন্তান হয়, খাদিজার ইচ্ছে ছিল ছেলের নাম রাখবে ‘মেঘ’। তাও আসল নাম না, ডাক নাম। কিন্তু একথা বাবাকে জানাতেই তিনি একনায়কের ভঙ্গিতে ডিক্টেশন জারি করেন- আমার নাতির এমন অমুসলিম নাম রাখা চলবে না। তার নাম হবে ‘এনায়েতউল্লাহ’। খাদিজার স্তব্ধতা সেদিন ভাঙ্গেনি।
২.
খাদিজা-আব্দুল্লাহর সংসারে এক নতুন অতিথি এসেছে আজ। গতকাল সারারাত আজরাইল-ডাক্তারে টানাটানির পর আজ সকালে পৃথিবীর আলো দেখেছে নবাগত ছেলে। সিজারিয়ান বেবী। মায়ের গর্ভে বাচ্চার পজিশন নাকি উল্টা ছিল। মা-ছেলে দুজনেরই প্রাণ যায় যায়। রক্ত লেগেছে এক ব্যাগ। ঐ সময় রক্ত না পেলে কী যে হত, আল্লাহই জানেন। পরিবারের কারো সাথে খাদিজার রক্তের গ্রুপ মিলেনি। এত রাতে কিভাবে রক্ত পায়- সে চিন্তায় সবাই যখন দিশেহারা, তখন কলিমুল্লাহ এক যুবককে নিয়ে আসে। রাত ১২টার সময় রক্ত দিয়ে গেছে অজানা-অচেনা সে যুবক - স্বেচ্ছায়, বিনামূল্যে। ভার্সিটিতে পড়ে সে। নাম সৌরভ। আশ্চর্য লাগে আব্দুল্লাহর। চেনেনা-জানেনা, অথচ এত রাতে এসে রক্ত দিয়ে গেল! শ্রদ্ধা জাগে মনে। তার জন্য দোয়া করতে ভুলে না - আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।
আশংকার সময় কেটে গেছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে নতুন অতিথি। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। আব্দুল্লাহর বড় ভাই সলিমুল্লাহ প্রস্তাব দেয়- এ ছেলের নাম বরকতউল্লাহ রাখলে কেমন হয়? পাশ থেকে নরম অথচ দৃঢ় কন্ঠে আব্দুল্লাহর বাবা জানিয়ে দেন- এর নাম হবে ‘সৌরভ’।
নাম শুনে অবাক তাকিয়ে রয় সবাই। ভুল শুনছি না তো? খাদিজা কোন কথা বলে না। তার দু’চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে ক’ফোঁটা জল।
(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)