Tuesday, March 31, 2015

অভিজিৎ-ওয়াশিকুরঃ আমার বুদ্ধিভিত্তিক পরিবারের সদস্য

ছোটবেলা থেকেই আমার একটা স্বভাব আছে - ভাল নাকি মন্দ সে ব্যাপারে এখন মাঝেমাঝেই সন্দেহ হয়, তবে অতি অবশ্যই সাধারণের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষাকে কেবল বইয়ের পাতায় আর পরীক্ষার খাতায় সীমাবদ্ধ রাখতাম না। অনুসরণ করতাম জীবনাচরণে, অন্ততঃ চেষ্টা করতাম। বই আর বাস্তবের মধ্যে ব্যতিক্রম দেখলে তাই প্রশ্ন করতাম, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌক্তিক উত্তর মিলতো না। নিজের জ্ঞান আর যুক্তিবোধ দিয়ে নিজের পথ বেছে নিতাম।

ক্লাস থ্রী কিংবা ফোরের কথা। ধর্ম বইয়ে পড়েছিলাম পৃথিবীর চার যুগের কথা - সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলি। প্রতিটা যুগের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ছিলো সত্য আর মিথ্যার অনুপাতে। সত্য যুগে মানুষ ১০০ ভাগ সত্য কথা বলতো, ত্রেতা যুগে ৭৫ ভাগ সত্যের সাথে ২৫ ভাগ মিথ্যা, দ্বাপর যুগে অর্ধেক সত্য আর অর্ধেক মিথ্যা। আর আমরা আছি কলি যুগে যখন মানুষ ৭৫ ভাগ মিথ্যার সাথে কখনো কখনো (২৫ ভাগ) সত্য বলে। মিলিয়ে দেখলাম চারপাশের সাথে। ঠিকইতো। আমরা এত মিথ্যা বলি যে, মেনে নিলাম ধর্ম বই ঠিকই বলছে। এরপর ক্লাস ফাইভে এক নতুন শিক্ষক এসেছেন। আমাদের অংক ক্লাস নেন। বেশ ভালো পড়ান। অন্য অনেকের মতো প্রশ্ন করলে বিরক্ত হন না, বা ধমক দিয়ে বসিয়ে দেন না। উনি একদিন পড়াচ্ছেন- ১২ বছরে ১ যুগ। আমার মধ্যে দন্দ্ব দেখা দিলো - কোথাও কোন গন্ডগোল আছে। সাহস করে প্রশ্নটা করেই ফেললাম, ধর্ম বইয়ে পড়লাম যুগ আছে ৪টা। আপনি বলছেন ১২ বছরে ১ যুগ। তার মানে কি ১২x৪=৪৮ বছর ধরে পৃথিবী আছে? কিন্তু তা তো না। তাহলে?

আমাদের গ্রামে কল্কি-নারায়ণ পূজার চল শুরু হলো এক সময়। কল্কি-নারায়ণ এক মস্ত ক্ষমতাধর দেবতা, যদিও তার কথা কোন ধর্ম বইয়ে পাইনি। তার কাছে মানত করে কিছু চাইলে সে মনোবাঞ্ছা পূরণ হবেই, বাধা-বিপত্তি দূর হবেই, রোগ-শোক সারবেই। তবে, একটা ঝামেলা আছে। মনোবাঞ্ছা পূরণ হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে তার পূজা দিতে হবে, না হলে মহাবিপদ। সে পূজায় একজন পূজারী কল্কি-নারায়ণের কাছ থেকে মানুষের ইচ্ছাপূরণের ও পরবর্তীতে তার পূজা না দেয়ার পরিণতির গল্প বলে। গল্পটা ভালোই লাগতো শুনতে। আমি গল্প শুনতে যেতাম। গল্পের পর ৩, ৫ কিংবা ৭ জন মানুষ একত্রে বসে কল্কি টানে। কল্কিতে নিয়ে তামাক টানা আর কি। এই তামাক টানাটা মানতে পারতাম না। ছোটবেলা থেকেই সিগারেট আর তামাককে এতটা খারাপ চোখে দেখতাম যে, তামাক টানাকে কখনোই ধার্মিকতা মনে হয়নি। আমি যখন বলতাম, তামাক খাওয়া ভালো না, তখন তারা বলতো ঠাকুরের জন্য তামাক খাওয়া খারাপ না। এরপর তাদেরকে ধর্ম বই দেখিয়েছিলাম, যেখানে লিখা আছে, "মনুসংহিতায় আছে, তামাক খেলে পরজন্মে শূকর হয়ে জন্মাতে হয়"। এরপর জিজ্ঞেস করেছিলাম, কল্কি-নারায়ণ পূজার নামে তামাক খাওয়া কি ধর্মসম্মত? কারো মুখে রা ছিলো না। আমার মা তখন আমাকে ধমক দিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা করেছিলেন।

বিভিন্ন বইয়ে, বিশেষ করে বাংলা, সমাজ ও ধর্ম বইয়ে, নীতিকথা থাকতো। প্রতিটা মানুষ সমান, কাউকে ছোট করে দেখতে নেই, জাতিভেদ করতে নেই। কথাগুলো মনের গভীরে গেঁথে গিয়েছিলো, যা থেকে এখনো বের হতে পারিনি। বিবেকানন্দের কথায় খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম- "জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।" তাই যখন দেখতাম, আমাদের ঠাকুর ঘরে কোন মুসলমান ঢুকতে পারতো না, তখন মাকে বিবেকানন্দের রেফারেন্স দিতাম। একবার দেখলাম, আমার ঠাকুমা তার নাতির সমান বয়সী ব্রাহ্মণ পুরোহিতকে পায়ে ধরে নমস্কার করছে। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই জাতিভেদ কেন? মা বললেন, ব্রাহ্মণতো, তাই। অবধারিত প্রত্যুত্তর ছিলো - বইয়ে তো জাতিভেদ করতে নিষেধ করা আছে!

প্রশ্ন কেবল হিন্দু ধর্মেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। স্বাভাবিকভাবেই ইসলাম ধর্ম চলে আসতো। হযরত ইব্রাহিম যদি দেখতো তার ছেলেই খুন হয়েছে, দুম্বা নয়, তাহলে কি মানুষজন নিজের সন্তানকেই বলি দিতো? আর, পুত্রের বদলে দুম্বা জবাইয়ের এই গল্প কতটুকুই বা বিশ্বাসযোগ্য? ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অর্ধেক উত্তরাধিকার আসলে মেয়েদের কতখানি সমতা দেয়? বেহেশতে হুর-পরীর লোভ কতখানি সভ্যতার পরিচায়ক?

সময়ের সাথে প্রশ্নের ধরনে পরিবর্তন আসে। ঈশ্বর/আল্লাহ কি আদৌ আছেন? সন্দেহ দেখা দেয়। সিদ্ধান্তে আসতে পারিনা। তাই সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে বরং নিজে ভাল থাকার ও ভাল কাজ করার মন্ত্রে উদবুদ্ধ হই। প্রশ্নটা মনে রয়েই যায়। নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি, বিজ্ঞান আর যুক্তিবাদিতা দিয়ে উত্তর খুঁজে বেড়াই। একসময় বুঝতে পারি বিবর্তন। বুঝতে পারি বিবর্তন, জীববিজ্ঞান আর জেনেটিক্সের অনিন্দ্য সুন্দর সহাবস্থান; যাদের সাথে ধর্মের অবস্থান সংঘাতময়। চিন্তায় পরিবর্তন আসে। সংশয়বাদিতা ছেড়ে এখন আমি নাস্তিক। নাস্তিকতা আমার কোন ধর্মীয় অবস্থান নয়, বরং আমার বুদ্ধিভিত্তিক অবস্থান।

অদ্ভূত, প্রশ্ন করা আজ আমার দেশে অপরাধ। বিজ্ঞানমনষ্ক হয়ে বুদ্ধিভিত্তিক অবস্থান নেয়া আজ ঘৃণ্যতম কাজ, যার যোগ্যতম পুরস্কার মৃত্যু। কী অদ্ভুত জাতি আমরা। ওয়াশিকুর বাবুর কথা আজ বড় বেশি সত্য -

"মোল্লা স্বাধীন, জঙ্গি স্বাধীন, ছাগু স্বাধীন, মুমিন স্বাধীন, দুর্নীতিবাজ স্বাধীন, রাজনৈতিক নেতা স্বাধীন, পাতি নেতা স্বাধীন, ধর্ষক স্বাধীন, সামরিক বাহিনী স্বাধীন, সুশীল সমাজ স্বাধীন, পিনাকী স্বাধীন, শফি হুজুর স্বাধীন, দলদাস স্বাধীন, গার্মেন্টস মালিক স্বাধীন, লঞ্চ মালিক স্বাধীন...

স্বাধীন নয় কৃষক-শ্রমিক,
স্বাধীন নয় কথিত সংখ্যালঘু-আদিবাসী,
স্বাধীন নয় মুক্তচিন্তার মানুষ,
স্বাধীন নয় মানুষ হতে চাওয়া মানুষগুলো..." 


ওয়াশিকুর বাবুর কথা আগে শুনিনি কখনো। অভিজিৎদার সাথে ব্লগে দুয়েকবার কথা হলেও, ব্যক্তিগত পরিচয় হয়নি কখনো। তারপরেও, তাঁরা আমার আত্মার আত্মীয়। আমার বুদ্ধিভিত্তিক পরিবারের সদস্য। রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের জন্যও এমন করে কাঁদিনি কখনো, যতটা কেঁদেছি তাঁদের জন্য। আর কোন মৃত্যু আমার মনোজগত আর জীবনাচরণকে এমন তছনছ করেনি কখনো, যতটা করেছে তাঁদের মৃত্যু।

অভিজিৎদা ও ওয়াশিকুর বাবু, আপনাদের মৃত্যু আপনাদের বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনকে দমাতে পারবে না। আপনাদের আদর্শ আমরা বহন করছি আমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে। মৃত্যুহুমকির এত সামর্থ্য কই আমাদের থামানোর! আমরা আছি আপনাদের আদর্শের ধারক হয়ে।

Tuesday, June 10, 2014

ফাঁকিবাজদের জন্য GRE

আগে GRE'র কথা মনে হলেই চোখে ভাসতো নাক-মুখ ডুবিয়ে ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করা বন্ধু-বান্ধবের ছবি। কিন্তু ও জিনিস আমাকে দিয়ে হবে না, বুঝে গিয়েছিলাম শুরুতেই। আমি ফাঁকিবাজ প্রজাতির। একেতো মুখস্থ বিদ্যা নেই একেবারেই, তার উপর কিছুক্ষণ পড়লেই মনে হয়, "অনেক পড়ে ফেলেছি, এইবার অন্য কিছু করা যাক!" আমার মতো ফাঁকিবাজ ও আরামপ্রিয় গোছের মানুষদের জন্য কিছু লেখার চেষ্টা করছি, যাতে কম পরিশ্রমে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। আবার, বিফলে মূল্য ফেরতের দাবি করবেন না যেন!

GRE কী - খায় না মাথায় দেয়?

GRE এর নামটুকু ছাড়া যারা আর কিছু জানেন না (আমার অবস্থা এরকমই ছিল!), তাদের জন্য এই অনুচ্ছেদ। যাদের সামান্য ধারণা আছে, তারা এ অনুচ্ছেদ না পড়লেও পারেন। GRE এর পুরো নাম হলো Graduate Record Examinations. ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স বা পিএইচডি করতে গেলে (বিশেষ করে আমেরিকাতে) GRE Revised General Test দেয়া দরকার হয়। এতে ৩টা অংশ থাকে - Verbal Reasoning, Quantitative Reasoning, ও Analytical Writing. নাম তিনটা একটু কঠিন শোনালেও, সোজা বাংলায় এগুলো আসলে ইংরেজি, গণিত ও রচনা লেখা। ইংরেজি ও গণিতে ৪০টা করে প্রশ্ন আসে, আর ২টা রচনা লিখতে হয়। মোট নম্বর- ইংরেজিতে ১৭০, গণিতে ১৭০, রচনায় ৬। আমরা সাধারণতঃ GRE এর যে স্কোরের কথা শুনি তা ইংরেজি ও গণিতের স্কোর। এখানে মজার ব্যাপার হলো, পরীক্ষায় বসলেই ইংরেজি ও গণিতে ১৩০ + ১৩০ = ২৬০ এমনিতেই পাওয়া যায়। ফাঁকিবাজ হিসাবে অনেক জেনে ফেলেছেন, আরো জানার ইচ্ছে থাকলে ঘুরে আসুন অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে - http://www.ets.org/gre


এত কথা বলেন কেন, কাজের কথায় আসেন, কত দিন সময় লাগবে বলেন ...

বুঝি, এক ফাঁকিবাজ শুরুতেই জিজ্ঞেস করে - ন্যূনতম কত দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে? আগে হয়তো তিন থেকে ছয় মাসের কথা শুনে থাকবেন। আমি অন্ততঃ তাই শুনেছিলাম, এবং অতি অবশ্যই শুরু করিনি। তবে... তবে, ফাঁকিবাজ হিসাবে ১ মাসের (এমনকি ১৫ দিনের) প্রস্তুতিতেও GRE দেয়া ও মোটামুটি ভাল স্কোর করা সম্ভব। আপনি কি নিজেকে এর চেয়েও ফাঁকিবাজ মনে করেন? সেক্ষেত্রে বলবো, আপনি কেবল ফাঁকিবাজই না, জিনিয়াসও। এবং এই লেখা আপনার জন্য নয়।


১ মাস? আসলেই? এ জন্য কী কী করতে হবে?

আগেই বলেছি, একটু কৌশলী হয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। যেটুকু না হলেই নয়, সেটুকুতো করতেই হবে। যেটুকু পড়লে তুলনামূলকভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায়, সেটুকু পড়তে হবে। ভর্তির সময় যে অংশের গুরুত্ব বেশি, সে অংশে জোর দিয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য ১ মাস নেহায়েত কম সময় নয়। আমার এক বন্ধু ১৫ দিন পড়ে পরীক্ষা দিয়েছে। অতএব, সম্ভব, খুবই সম্ভব। বেশি কথা না বলে, চলুন বিষয় অনুযায়ী দেখি, কীভাবে কী করা যেতে পারে।


গণিত (Quantitative Reasoning)

GRE তে একেবারেই স্কুল-পর্যায়ের, কিছু ক্ষেত্রে কলেজ-পর্যায়ের গণিত আসে। বিজ্ঞান বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র/ছাত্রী হিসাবে এই গণিতটুকু আপনার জন্য খুব সম্ভবতঃ ডাল-ভাত। একারণে আমি অনেককেই (নিজেকে সহ) দেখেছি গণিতের ক্ষেত্রে গুরুত্ব একটু কম দিতে। কারণ, এটাতো আমি পারিই! আমার মতে, গণিতেই সবচেয়ে ভাল করে প্রস্তুতি নেয়া উচিত। কেন? কারণ, এটা এমন এক বিষয়, যেটাতে আমার পক্ষে খুব ভাল করা সম্ভব। আমার পক্ষে ইংরেজিতে খুব ভাল করে কাউকে (কোন প্রফেসরকে) খুশি করা সম্ভব না, তবে গণিত দিয়ে সেটা সম্ভব। ধরুন, একজন গণিত ও ইংরেজিতে ১৬৩ + ১৫৫ = ৩১৮ পেয়েছে। আরেকজন পেয়েছে, ১৭০ + ১৪৭ = ৩১৭। আমি প্রফেসর হলে, ২য় জনকেই হয়তো বেছে নিতাম। সে হয়তো ইংরেজিতে একটুখানি কাচা, তবে গণিতে এক্কেবারে খাঁসা। এছাড়া ইংরেজি যেহেতু তার মাতৃভাষা নয়, এতে একটু দুর্বল হওয়াটাই স্বাভাবিক।

হয়তো ভাবছেন, "বুঝলাম, গণিতে ভাল করা দরকার। কিন্তু এতে এত গুরুত্ব দেয়ার কি আছে? এটাতো পারি!" আসলে কি জানেন, প্রশ্নকর্তারা জানেন, খুব ভাল করেই জানেন, সহজ অংকেও আপনি কোথায় কোথায় ভুল করতে পারেন। আর সেই অংকগুলোই আসে পরীক্ষায়; ডাল-ভাত অংক, তবে সতর্ক না থাকলে ডাল-ভাতেই বিষম খেয়ে যাবেন! তাই অংক পারেন বলে, একে হাল্কাভাবে না নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভালভাবে প্রস্তুতি নিলে ভুল করার জায়গাগুলো সম্বন্ধে সতর্ক হবেন। প্রস্তুতির সময় দেখবেন, মাঝে মাঝে এমন সব ভুল করছেন যে, নিজেরই মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। আমিতো সাধারণ যোগ করতে গিয়েই অনেক ভুল করি। প্রস্তুতির সময় নতুন তেমন কিছু হয়তো শিখবেন না, তবে কোথায় কোথায় ভুল করেন সেটা জানবেন। আর এটাই গণিতে ভাল করতে সাহায্য করবে আপনাকে, আপনার স্কোর হয়তো ১৬৩ থেকে ১৭০-এ নিয়ে যাবে। গণিতে তাই অনুশীলনের পর অনুশীলনই মূল প্রস্তুতি।

কোথা থেকে অনুশীলন করবেন? আমি Nova's GRE Math Bible থেকে অনুশীলন করেছি। আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। অনেকেই Manhattan GRE বইকে গণিতের জন্য সবচেয়ে ভাল বই বলে থাকেন। এটা থেকেও অনুশীলন করতে পারেন। যেখান থেকেই করুন না কেন, অনুশীলনটাই মূখ্য। নিজের জানা ভুলগুলো এড়িয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ভাল স্কোর আসতে বাধ্য।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা উচিত যে, কোন একটা বা কয়েকটা অংক না পারলে হতাশ হওয়া বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কোন অংকে আটকে গেলে, "এ অংক আমি মিলাবোই" বলে অহেতুক সময় নষ্ট করা বোকামি। বাকি অংকগুলো করার পর সময় থাকলে, চেষ্টা করা যাবে।

গণিত নিয়ে কথা শেষ করার আগে আবারও বলি, অনুশীলনই এখানে চাবিকাঠি



রচনা লিখন (Analytical Writing)


হয়তো অবাক হচ্ছেন, গণিতের পর ইংরেজির কথা না বলে রচনার কথা বলছি কেন। আমি জেনেশুনেই এমনটা করছি। আমরা GRE বলতে সাধারণতঃ কেবল গণিত আর ইংরেজিকেই বুঝি, যেখানে ইংরেজি নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকি। রচনা লিখে নিয়ে তেমন চিন্তাই করি না। এটা বড় ধরনের একটা ভুল। আপনার প্রোফাইল খুব ভাল হলেও, কেবল খারাপ রাইটিং স্কোরের কারণে আপনার এডমিশন আটকে যেতে পারে। নটরডেম ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসর বলেছিলেন, পিএইচডি'র শতকরা ৪০ ভাগই হলো লেখালেখি। তাই, স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির সময় লিখনীতে ভাল স্কোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রচনা লিখনের জন্য কী কী দরকার? সবার আগে যা দরকার তা হলো, এই অংশটা সম্বন্ধে ভাল ভাবে জানা। এরপর দরকার কিছু টিপ্‌স্‌। এবং অতি অবশ্যই অনুশীলন। ইউটিউবে একটা প্লে-লিস্ট আছে, http://www.youtube.com/playlist?list=PLTGjCRqeH7hPlLtgMdkS8I-iBFqqYCiBN, এখান থেকে শুরু করা যেতে পারে। আর অনুশীলনের জন্য পর্যাপ্ত টপিক পাওয়া যাবে এখানে - http://www.ets.org/gre/revised_general/prepare/analytical_writing/issue/poolhttp://www.ets.org/gre/revised_general/prepare/analytical_writing/argument/pool

অনেকে ব্লগে লেখালেখির আর একাডেমিক লেখালেখিকে এক করে দেখেন। আসলে এ দুই ধরনের লেখালেখি খুবই ভিন্ন প্রকৃতির। একাডেমিক লেখালেখির জন্য কিছু গাইডলাইন পাওয়া যেতে পারে এখানে - http://vuonlen089.files.wordpress.com/2013/02/the-best-guide-to-ielts-writing.pdf। যদিও এটা IELTSএর জন্য গাইডলাইন, তবে ফরমাল ও ইনফরমাল লেখালেখির মধ্যে পার্থক্য বুঝার জন্য এটা সহায়ক। এখানে মনে রাখা উচিত, ফরমাল-ইনফরমাল নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে যেন মূল বিষয় দুর্বলভাবে প্রকাশ না করি।

একাডেমিক লেখালেখিতে প্রাসঙ্গিক যুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কম কথায় যুক্তিগুলোকে একের পর এক ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে লিখতে পারলে ভাল স্কোর আসবে। আবারো বলছি, রচনা লিখার ক্ষেত্রে যুক্তির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। একেকটা অনুচ্ছেদ একেকটা যুক্তি বা পয়েন্ট ধারণ করলে ভাল হয়। অনুচ্ছেদের প্রথম লাইন পড়েই যেন পাঠক বুঝতে পারে, এই অনুচ্ছেদটা কী বলতে যাচ্ছে। এছাড়া যুক্তিগুলোকে এলোমেলোভাবে একের পর এক না লিখে, একটা থেকে আরেকটার মধ্যে সম্পর্ক দেখিয়ে (লিংকিং করে) লিখা উচিত।

অনুশীলন না করে এসব নিয়ম জেনে তেমন কোন লাভ নেই। তাই অনুশীলন করুন। এখানে ফাঁকি দিলে ফলাফলও আপনাকে ফাঁকি দিতে পারে।


ইংরেজি (Verbal Reasoning)

এই ইংরেজির কারণেই GRE কে সবচেয়ে বেশি ভয় পেতাম। হাজার-হাজার শব্দ মুখস্থ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আসলে শব্দ মুখস্থ করার গুরুত্ব কতখানি, তা ভাববার বিষয়। 'Verbal Reasoning' এই শব্দ দুটো থেকেই এটা পরিষ্কার যে, Reasoning অর্থাৎ যুক্তি বা বিচার-বুদ্ধির প্রয়োগটাএখানে  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো দুয়েকটা শব্দ না জানতে পারেন, তবে একটা লাইন বা একটা অনুচ্ছেদ পড়লে মূল অর্থটা হয়তো ধরতে পারবেন। এজন্য আপনাকে আপনার বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। ধরুন, একজন বললো - "আপনি মানুষটা এমনিতে ভালো, কিন্তু ... ।" কিন্তুর পরে কি আছে না জেনেই বলতে পারছেন, লোকটা আপনার সম্বন্ধে কোন ঋণাত্মক মন্তব্য করতে যাচ্ছেন। এই ভিডিওটা দেখতে পারেন - http://www.youtube.com/watch?v=09_C4Tpw4zU। GRE তে আপনি কয়টা শব্দ জানেন তা মূখ্য নয়, বরং আপনি বিষয়বস্তু ধরতে পারছেন কিনা তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তাই বলে কি, শব্দ মুখস্থ করতে হবে না? হবে। যেটুকু না করলেই নয়, সেটুকুতো করতেই হবে, তাই না?
আমি শব্দ মুখস্থ করেছি মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ (বড়জোর ৫০০) শব্দ। আপনি যদি তাও না করতে চান, তাহলে বলবো অন্ততঃ ২০০ শব্দ পড়ুন। Kaplan এর GRE Verbal Book এ প্রায় ২০০ হাই-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ আছে, যেগুলো GRE-তে প্রায়ই আসে। এগুলো সমার্থক শব্দ ও প্রয়োগসহ পড়ুন। এরপর যদি চান, Barrons - এর বইয়ের হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দগুলো (প্রায় ৩৫০টি) পড়তে পারেন। এর মধ্যে Kaplan এর অনেক শব্দ পাবেন, যেগুলো ইতোমধ্যেই আপনার জানা। ফাঁকিবাজ না হলে, আরো পড়তে পারেন।

শব্দভান্ডার মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে গেলে মাথা-খাটানোর পালা, বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করার পালা। Major Tests (www.majortests.com) থেকে ইংরেজি অংশ অনুশীলন করুন। Major Tests এর একটা ভাল বৈশিষ্ট্য হলো, কোন উত্তর ভুল হলে তার ব্যাখ্যা দেয়া থাকে। অনুশীলন করতে গিয়ে হয়তো অনেক কিছুই পারবেন না, তবে ব্যাখ্যাগুলো পড়ে কিছু কৌশল পাবেন, যা আপনার উপকারে আসবে।

ইংরেজি অংশে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ গুণ দরকার- দ্রুত পড়তে পারা। আপনার যদি এই গুণ থেকে থাকে, তাহলে খুবই ভাল। নাহলে যেহেতু এক মাসের মধ্য এই গুণ অর্জন করা সম্ভব নয়, তাই একটা টিপস দিতে পারি। প্রথমে শূণ্যস্থান-পূরণ গুলো (Text Completion ও Sentence Equivalence) দ্রুত শেষ করুন। মাঝে Comprehension দেখলে আপাততঃ বাদ দিয়ে যান, তবে কম্প্রিহেনশনগুলোর দৈর্ঘ্য লক্ষ্য করুন এবং এর সাথে কয়টা প্রশ্ন আছে দেখুন। শূণ্যস্থান পূরণগুলো শেষ হলে, দৈর্ঘ্য ও প্রশ্নসংখ্যার উপর ভিত্তি করে পছন্দের কম্প্রিহেনশনে ফিরে আসুন। উল্লেখ্য, কম্প্রিহেনশন ঠিকমতো বুঝে পড়তে পারলে, এর প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া সহজ হয়; অতি অবশ্যই বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হয়। এছাড়া, কম্প্রিহেনশনেগুলোর প্রশ্নে অনেক ক্ষেত্রেই মাত্র একটা শুদ্ধ উত্তর থাকে, এখানে দৈবচয়নের ভিত্তিতে উত্তর দিলেও সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শব্দ মুখস্থ করার জন্য অনেকেই বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে থাকেন। আমার জন্য একটা বড় সমস্যা ছিলো- এই অ্যাপগুলোতে প্রচুর শব্দ থাকে, আমি যেসব শব্দ পড়েছি সেগুলোর বাইরে শত-শত শব্দ থাকে। তাই এইচটিএমএল/জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে কয়েকটা ছোট ওয়েবপেজ তৈরি করেছিলাম নিজের শেখা শব্দ দিয়ে অনুশীলন করার জন্য। এগুলো আমার ব্যক্তিগত ব্লগে (http://alorchhota.blogspot.com) রেখে দিয়েছি। Kaplan এর শব্দগুলোর জন্য দুইটা ব্লগ - http://alorchhota.blogspot.com/2014/06/gre-practice-gq-kaplan.html, http://alorchhota.blogspot.com/2014/06/gre-practice-gfill-kaplan-187-words.html। চাইলে এখান থেকে অনুশীলন করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, শব্দ মুখস্থ করার চেয়ে মাথা খাটানোর গুরুত্ব বেশি।



আর কিছু?

হ্যাঁ, শেষ আরেকটা বিষয়। আপনি যতই প্রস্তুতিই নিন না কেন, যতক্ষন পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্র্যাকটিস টেস্ট না দিবেন, ততক্ষন পর্যন্ত আপনার প্রস্তুতি শেষ হবে না। প্র্যাকটিস টেস্ট দিলে মূল পরীক্ষা সম্বন্ধে ভাল ধারণা হয়, যা আর কোনভাবে হয় না। তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটা বিষয়ে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিয়ে (প্রস্তুতি শেষ হোক বা না হোক), প্র্যাকটিস টেস্ট দিন। এতে আপনি আপনার অবস্থান বুঝতে পারবেন, শক্তি ও দুর্বলতা সম্বন্ধে ধারণা পাবেন, এবং সে অনুযায়ী বাকি প্রস্তুতি নিতে পারবেন। এখানে (http://www.msinus.com/content/free-full-length-gre-tests-672/#.U5a5jvmSxn4) কিছু বিনামূল্যে সম্পূর্ণ প্যাকটিস টেস্ট দেয়ার লিংক আছে। এর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন।


বিশেষ দ্রষ্টব্য

বেশি সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়ে, বেশি পড়াশুনা করে GRE দেয়া ফাঁকিবাজের প্রস্তুতির চেয়ে অবশ্যই ভালো। তবে, এ লেখা কেবলই ফাঁকিবাজদের জন্য।


অনেক প্যাঁচাল পারছি

শুভকামনার ব্যাপারে ফাঁকিবাজি না করি। আপনার পরীক্ষা ভাল হোক।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার: জওশন আরা শাতিল।

Monday, June 9, 2014

GRE Practice: GFill-MajorTest (131 words)


(write whole word)