Monday, March 22, 2010

গুলশান এক্সপ্রেস

বস্তার মধ্যে ধান ভরেছেন কখনো? কিংবা অন্য যেকোন প্রকারের মালামাল? তাহলে বস্তার উপরের দুই প্রান্ত ধরে ঝাঁকানাকা দেবার কথা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। পুরো ঠেসে মালামাল ভরার পরেও, একটুখানি ঝাঁকানাকার ফলে কোথা থেকে যে আরো জায়গা বের হয় - এমনটি ভেবে অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই কোন-না-কোন দিন। অবশ্য যদি কোনদিন আসলেই কাজটি আপনি করে থাকেন। এই ঝাঁকানাকার প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সম্মান রেখেই বলছি- আমি এখন যে বাসখানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, সেটিকে যতই ঝাঁকানো হোক না কেন, আর একজন লোকও অতিরিক্ত নেয়া যাবে না তাতে।

৬ নম্বর বাসের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমি। দাঁড়িয়ে আছি না বলে যদি বলি "আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে" ভুল হবে না মোটেও। এদিক-ওদিক থেকে কত জন মিলে যে আমার শরীরটাকে ধাক্কা মেরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে- আমি ঠিক নিশ্চিত নই। এক হাতে প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজনের ব্যাগ, যেটি পায়ের কাছাকাছি কোথাও আছে। আমার চক্ষুদ্বয়ের সাহস নেই যে ঘাড়কে বলে - "মাথাটা একটু নোয়াও তো, ব্যাগটা একটু দেখি"। অন্য হাতখানি আরেকজনের ঘাড়ের উপর দিয়ে কোন এক রড ধরে আছে। যদিও হাতখানির যুৎ হচ্ছে না তেমন, তবুও নড়তে পারছে না হাত দুটো, পাছে পাশের জনের নাকখানি ভেঙ্গে যায়।

পদার্থবিদদের এই মুহুর্তে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে- "আমার আর পাশের লোক শরীরের মধ্যে দূরত্ব কত?" কেউ যদি ফড়ফড় করে উত্তর দেয় 'শুন্য', তবে তাকে 'অপদার্থ' বলে গালি দেয়ার ইচ্ছেটাও ষোল আনা। আরে বাবা, ঐ লোকের চাপে আমি যে চ্যাপ্টা হয়ে গেলাম, আমার শরীর যে সংকুচিত হয়ে গেল, সেই হিসাব যাবে কোথায়? দেখে যাও পদার্থবিদগণ- দূরত্ব এখানে ঋণাত্মক!

আচ্ছা, আমি যদি এই মুহুর্তে আপনার  কাছে একটু সাহায্য চাই, করবেন? বেশি কিছু না, সামান্য, খুব সামান্য। অন্যের কাছে সাহায্য চাইতে ভাল লাগে না, কিন্তু কী করি বলেন, আমার যে খুব দরকার। কীভাবে যে বলি... যাই হোক, বলেই ফেলি- "আমার চুলগুলো কপালের উপর এসে পড়েছে, অস্বস্তি লাগছে, সরিয়ে দিবেন? নাকটাও খুব চুলকাচ্ছে, একটু চুলকিয়ে দিবেন?"

8 comments:

Bappy said...

হাহা!! বইলেন ;)

আলোর ছটা said...

@বোহেমিয়ান: বলি নাই? ;)

basharcse said...

আফসুস সাহায্য করার কেউ নাই...

Sheetal said...

:D sundor hoise likha ta

আলোর ছটা said...

@Bashar: tumi? :P
@Sheetal: sundor dhonnobad :)

mahmud said...

ইশশ, মনে পড়ে গেলো সেই ছয় নম্বর বাসের কথা :-(

আমার বাসা ছিলো বনানী ২ নাম্বার রোডে। কোচিং জাতীয় কারণে দীর্ঘ একটা সময় ফার্মগেট থেকে এই বাসে চড়ে আমাকে মহাখালী যেতে হত!!
খুলনা এসে বড্ড বেঁচে গিয়েছিলাম... ছুটি-ছাটায় বাসে চিপা খাইলে বাসায় এসে ভুলে যেতাম। আবার ফেরত যেতে হবে এই ভয়ংকর ঢাকার এই ভয়ংকর বাসে চিপা খাইতে। কারণ এখন বাসা মালিবাগে :((

ভাইয়া, দুঃখের সবৈর্ব আমি উপলব্ধি করতে পারিলাম... :D

Unknown said...

valo :) pore hashio pelo, abar amar ofis jiboner kotha mone kore kharapo laglo...same situation e roj ofis jetam !

আলোর ছটা said...

আমি এখন প্রায়ই অফিসে যাই হেঁটে হেঁটে :)