স্বপ্নের ঠিকানা
স্বপ্ন যদি জীবন হয়
পৃথিবী এক মহাশ্মশাণ।
একটু পর দুয়েকটা চাপা আমিও মারব। তবে, প্লি--জ ঝারি মরবেন না। আমিই সত্য কাহিনী বলে দিব।
চাপা-১: শামীম যে বক্সটায় কয়েন জমাত - সেটা এখন খালি... না না, পুরা খালি না, তিনটা এক টাকার কয়েন এখনো অবশিষ্ট আছে।
চাপা-২: তানিয়া যে বক্সটায় কয়েন জমাত - সেখান থেকে সব কয়টা পাঁচ টাকার কয়েন উড়ে গেছে। না, সব কয়টা না... মাত্র আড়াইশটার মত উড়ে গেছে।
চাপা-৩: বেলায়েত ভাইয়ের মানিব্যাগে থাকা লাখ টাকার হিসাব মিলছে না।... না, মানে... লাখ টাকা না, হাজার টাকা।
চাপা-৪: শান্তা আপুর কানের সোনার দুলটা পাওয়া যাচ্ছে না।... না, আসলে সোনার না, সোনার জলে ধুয়া।
চাপা-৫: মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে শামীম Head & Shoulder-এর যে বোতলটা কিনেছিল - সেটাতে এখন আর কিচ্ছু নাই। ... না, মানে... কিছু নাই- তা না, বোতল ভর্তি পানি আছে।
দেখলেন... আমি কত্ত সহজ-সরল মানুষ! চাপা মারার পরপরই কেমন সত্য কথা বলে দিলাম!! তবে একটা সত্য চাপা না মেরে সোজাসুজিই বলি - দুই দিন আগে (ঈদের পরদিন) আমাদের বাসার কাজের মেয়েটা বাড়িতে বেড়াতে গেছে।
“: সেজদা, সন্ধ্যাতো হইল... কিছু খাইবেন?
: পাউরুটি আছে?
: পাউরুটি খাইবেন? (একটু চিন্তা করে) আছে। কেমনে খাবেন? কলা দিয়া? নাকি দুধ দিয়া ভিজাইয়া?
: কলা দিয়াই দাও।
... ... এরপর... আসলে এর অনেকক্ষণ পর সে আসল- কলা আর পাউরুটি নিয়ে। খাওয়া হল। খাওয়ার পর-
: (আমতা-আমতা স্বরে) আপনেরে একটা মিছা কথা কইছি...
: কি? এখন নিচের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে আনলা?
: আয়-হায়! (মাথায় হাত) আপনি বুঝলেন কেমনে? (বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল অল্পক্ষণ, এরপর দ্রুত বলে যেতে লাগল)... তহন পাউরুটি নাই- এইডা কই নাই কেন জানেন? কইলে যদি আপনে কন- খাইবেন না!”
“: মাসি, আমি কইলাম কারুর বিয়াতে যাইনা। কুনো অনুষ্ঠানেও যাইনা। তয় সেজদার বিয়াতে কইলাম যামু। আমারে কইয়েন কিন্তুক…”
উপরের কোন কথায় কি ভালবাসার কোন কমতি আছে? আমি দেখি না। যদি কোন কমতি দেখা যায়, তবে সেটা আমার লেখার অক্ষমতা... বাস্তবে কখনোই ভালবাসার কোন ঘাটতি চোখে পড়েনি।
ও হ্যাঁ, ভাল কথা... চরিত্রগুলোর পরিচয় দেয়া হয়নি এখনো। ওই যে ‘সেজদা’- সেটা এই অধম ‘আমি’। ছোট্ট মামাত-খালাত ভাই বোনেরা এ নামেই ডাকে আমায়। অবস্থা এমন যে - তাদের বন্ধু-বান্ধবীরাও আজকাল এ নামেই ডাকে। আরে!, আমি সবার ভাই(!) হতে যাব কোন দুঃখে! :P আর ওই যে ‘মাসি’ - আমি তার অবাধ্য সন্তান - আমার মা।
আর এত্তসব কথা যার- সে ‘বিভা’। আমার মাসির বাসার কাজের মেয়ে। এই মাসির বাসায় আমি প্রায়ই যাই- কারণে-অকারণে। বড় মাসতুত বোনটাকে খোঁচাতে খুবই ভাল লাগে আমার। আমার পিছনেও লেগে থাকে সে! শুধু সে না... বাসার সবাই। সমপর্কটা তাই বরাবরই ভাল। কিছুদিন আগে অসুস্থ ছিলাম। তাই ওঠে গেছি মাসির বাসায়। ভাল ভাল খাবার... আদর-যত্ন...বুঝতেই পারছেন! মাসি থাকে ঢাকার বাইরে, চট্টগ্রামে- চাকরির কারণে। এদিকে বাসার দেখভালের পুরু দায়িত্বটাই থাকে বিভার উপরে। মেয়েটা কী সুন্দর করেই না বাসা সামলায়! মাসতুত বোন দুটি যদি কোন কারণে- বিশেষ করে খাওয়া আর পড়া নিয়ে অবুঝের মতো আচরণ করে, সে কী চমৎকার করেই না বুঝায় তাদের! কখনো যুক্তি দিয়ে কখনোবা দার্শণিকের মত কথা দিয়ে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রই।
মাসির বাসায় একটা এক্সট্রা মোবাইলে আছে - সিটিসেল। খুবই পুরানো মডেল। ঠিকমত চার্জও থাকেনা। সারাদিন চার্জ দিতে হয়। তবুও সেটটা আছে। শুধু আছে না, বহাল তবিয়তে আছে। কয়েকদিন আগে পুনরায় রেজিস্ত্রেশনও করা হয়েছে। আমার মেসোর আবার সব কিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি কি না... বাসায় আরো দুই-দুইটা মোবাইল থাকার পরেও যদি কখনো এমন হয় যে- কেউ বাসায় নাই, তখন কি হবে? হায় হায়! তখন কি হবে?? সুতরাং বাসায় তো একটা এক্সট্রা মোবাইল রাখতেই হয়! চুপি চুপি আরেকটা কথা বলে রাখি- এখন ওই বাসায় টিএন্ডটি লাইনও আছে। যাই হোক, ওই মোবাইলটা এখন অনেকটা বিভার হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে- ওই মোবাইলে কল আসলে কে করল সেটা না দেখেই মেসো সজোরে চিৎকার দেয় - ‘অই বিভা... তোর ফো---ন’। কিংবা কখনো যদি ওই সেটটা খুঁজতে হয়, সবাই বলে- ‘বিভার মোবাইলটা কোথায়?’ ওই সেটে যে কয়েকটা কল আসে, সেগুলো বিভারই।
একদিন সন্ধ্যায় বিভা আমাকে বলছে-
“: জানেন সেজদা, আজকে না আমার মনডা খুবঐ ভালা
: (তার চোখের ঝিলিক দেখে ভাল লাগে) কী এমন ঘটল আজ - শুনি।
: আইজকা আমার বইনপুতে ফোন করছিল। বহুদিন বাদে আইজ কথা হইল হের লগে!
: তাহলেতো তোমার মন খুবই ভাল!
: হ! ... আরে, হের লাইগগাই তো আজকা রিক্সাওলারেও কিছু কইলাম না।
: রিক্সাওলা আবার কি করল? (কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি)
: আর কইয়েন না। বাইরে গেছিলাম একটা কামে। বসায় তাড়াতাড়ি ফেরত আওন দরকার। কোন রিক্সা আইয়ে না। হেশে এক বান্দরের রিক্সায় উঠছি। হের মুখ যে এত্ত খারাপ! (চেহারায় ঘৃণার ছাপ স্পষ্ট) কী কমু সেজদা! হারাডা রাস্তা খারাপ খারাপ কথা কইতে কইতে আইছে। নামুনের সময় ভারা লওনের পরে কয় কি জানেন? ‘আবার দেখা হইব!’ হু! (ভেংচি কাটে সে)
: (তার বলার ঢং দেখে আমি হাসি)
: হাইসেন না... হাইসেন না... মেজাজডা আমার এমুন খারাপ হইছিল! অন্যদিন হইলে আমি হেরে জুতা দিয়া মারতাম। খালি মনডা ভালা আছিল বইলা...”
কয়েকদিন পরের কথা-
“: জানেন সেজদা, আজকা না আমার মনডা খুবঐ খারাপ!
: কেন? আজকে আবার কী ঘটল? (অজানা আশংকার ঘন্টা বাজে মনে)
: আইজকা আমার ঐ ভাই ফোন করছিল।
: কোন ভাই?
: ওই যে ছোডবেলায় যেয় হারাইয়া গেছিল।
: তাইলেতো তোমার মন ভাল থাকার কথা!
: আর ভালা... (দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে) জানেন ফোন কইরা কি কয়?
: কি কয়?
: হেয় ফোন করছে... আমি জিগাই কেমন আছস? আর হেয় কয় কি জানেন? তর কাছে ২০ হাজার টাহা হইব? (কথা বলতে বলতে আস্তে আস্তে রেগে যাচ্ছে সে) আরে! এত্তদিন পরে ফোন করছস - জিগাবি তো কেমুন আছি! না, হেয় কয় টাহা দে! (মেজাজ এখন চরমে)
: এত টাকা তোমার কাছে চায় কেন?
: আর কইয়েন না... বাবারে টাহা পাডাইতো... বারির হগলে মনে করে আমি টাহার গাছ! যার যহন টাহা লাগে খালি আমার কাছে চায়। (অভিনয় করে সুরে সুরে বলতে শুরু করে) অই বিভা আমাগ ঘরটা ঠিক করুম- দশ হাজার টাহা দিস ... ক্ষেতে ফসল করুম- কিছু টাহা না অইলেঐ না... মাসি, আমারে জুতা দিবা না?... এক দুলাভাই আছে- হেয় হগলেরে ধার দেয়, হেয়ও কয়- কষ্টে আছি, কিছু টাহা পাঠাইসতো... ... আর না দিলেঐ ভালা না আমি।
: (আমি চুপ করে চেয়ে থাকি। কোন শব্দ খুঁজে পাইনা)
: আবার দেহেন, জীবনে একদিন আমার খুঁজও লয় না। আমি কেমনে থাহি না থাহি কিচ্ছু জিগায় না। (দুঃখ-ভরা অভিমানী কন্ঠে) ছোডবেলা থেইক্কা মাইনষের বাড়ি বাড়ি কাম কইরা খাই। কতদিন না খাইয়াও থাকছি। বড় ভাই একবার কয়ও নাই যে- আমার বাড়িত খা! (কথা বলতে বলতে সে আবার রেগে যেতে থাকে) আর টাহা চাওনের বেলায় আমার কাছে...
: (তার গলার ঝাঁঝ আমাকেও ছুঁয়ে যায় । আমি এখনও কথা বলতে পারিনা। বিভা আপন মনে বলতে থাকে)
: ভাবছিলাম ছোডডা ভালা হইব... নাহ, হেয়ও! (রাগ এবার বিত্রৃষ্ণার রূপ নেয়) ধুর! এইতানের লগে সম্পর্কঐ রাহুম না। এইতানেরা জীবনে আমারে না কোনদিন দেখছিল, না কোনদিন দেখব।... হেগো সম্পর্ক ধুইয়া কি পানি খাইমু! ”
এত ভালবাসা যার মনে- সে ভালবাসা পায়না। তার আটপৌড়ে ভালবাসা ঠুঁকরে মরে পয়সার কাছে... লোভের কাছে... অমনুষ্যত্যের কাছে...
It’s few days I’m suffering mentally.
My THAMMA (grand-mother) … about 95 years of age... She got ill some days ago… seriously ill. It seems that it is her last disease in life. Jaundice – the disease. Doctor said- it’s due to a STONE in her stomach. Operation might be needed. Unfortunately her age and physical condition might not support this. But it’s the specialist doctor who can confirm whether it would be possible or not. So she should be transferred to
Her sons and daughters met together… discussed the situation. Pathetically, they reached in conclusion that her physical condition is not that much well to transfer her to
This decision just shocked me…. The main person behind this is some elder person – mighty enough to suppress others. I don’t know who were against this decision, but could not protest. My father was such one. But he did not posses enough courage to deny. Shame! My elder brother tried to change the decision. He got some in his side … even including he mighty person. Although not from heart, but from social point of view. But almost all put ALL RESPONSIBILITIES to my brother. Strange!! One person is trying, but all are discouraging him!! Pity… just pity… Even a son who stays in
The ultimate bad man is myself... Just observing, doing nothing.... shame on me!
My mother telephoned me to go home, as thamma can lie to death any time… I’m going… …
আজকের প্রথম আলোর শিরোনামগুলো জটিল না?
* বসুন্ধরার মালিকের ছেলেকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে ২০ কোটি ঘুষ নিয়েছিলেন বাবর
* এস আলম গ্রুপ জমা দিয়েছে ৮০ কোটি টাকা
* ঢাকা সাভার গাজীপুরে ফালুর ১৫২ কোটি টাকার জমি
* নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন হুদা
* বনের রাজার আরো ২ কোটি টাকার সন্ধান - স্ত্রীর নামে ধানমন্ডি-উত্তরায় ২০ কাঠা, গাজীপুরে ১০০ বিঘা জমি
* আ ন হ আখতার ও তাঁর স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ আছে সোয়া ২ কোটি টাকার
আর কিছু বলার দরকার আছে কি???
ঊফ! কী অসহ্য গরম!! অতীষ্ঠ হয়ে গেলাম। এইমাত্র pc'র সামনে বসলাম দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মত স্নান শেষে... চিটচিটে অস্বস্তিকর ভাবটা রয়ে গেছে এখনও। একটু আগে দিপুকে দেখলাম বসে আছে- গায়ে কেবল একটা গামছা জড়ানো। এমন দৃশ্য দেখার পরেও বাতাস আর সূর্যের গল্পটা ভুলে থাকি কীভাবে? ... ওই যে গল্পটা... বাতাস আর সূর্য ঝগড়া করছে... দুজনেরই দাবি সে বেশি শক্তিশালী... কিন্তু কে মানে কার কথা?... তো হয়ে যাক পরীক্ষা... রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে এক পথিক... গায়ে নতুন জামা... ঠিক হল- ওই জামাটা যে খুলতে পারবে সে-ই জয়ী... বেচারা বাতাস! শত চেষ্টা করেও পারল না, লোকটা উল্টা জামা ঝাঁপটে ধরে... এদিকে সূর্য মামা চেষ্টা শুরু করতেই লোকটা জামা-কাপড় খুলে সোজা পুকুরে...
দুপুরের কথাটাই-বা ভুলে থাকি কীভাবে? বাঘ-মামা (ইমন) চাকরি পেয়েছে... এই খুশিতে খাওয়াচ্ছে সে... বাক-বাকুম করতে করতে শর্মা হাউজের দিকে রওনা দিলাম আমরা নয় জন। মজাটা টের পেলাম রাস্তায় এসে... রিক্সা নেই... পলাশী মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি... কাঠফাঁটা রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে... একবারের জন্য মনে হল খেতে না গেলেই ভাল হয়... আমার মত মানুষের মুখে এই কথা! আমি নিজেই অবাক!! কিছুক্ষণ পর একটা রিক্সা পেলাম... ভাড়া বেশি চাইলেও মুলামুলি করার সাহস দেখালাম না... গরমে শুধু আমার না, পরিবর্তন দেখলাম অন্যদের মাঝেও... আরাম করে বসতে না পারলেও রিক্সার হুড তুলতে বাঁধা দিল না (ঘাউড়া) শিশির! এবার তাহলে বুঝ ঠেলা!! ঊফ আর সহ্য হয় না... কবে যে আবার শান্তি আসবে!!!
ছবিটার দিকে তাকালে প্রথমেই কোন জিনিসটা চোখে পড়ে? নিশ্চয়ই দুজনের সাবলীল হাসি, তাইনা? ছোট্টমনিকে বিশেষ করে নজরে পড়ে না? অমন নিষ্পাপ হাসি কি কারো দৃষ্টি এড়ায়? ... ও আমার ভাগ্নি। দেখতে দেখতে ছয়-ছয়টি মাস পার করে দিল। তার নাম... অনেক নাম তার ... মা (আমার বোন) রেখেছে ‘স্বাগতা’, বাবা ‘বৈশালী’, ঠাকুমার দেয়া নাম ‘অহনা’, বড় মামার পছন্দ ‘আদৃতা’, দাদু ডাকে ‘স্বপ্না’, ‘দেবাদৃতা’ নামটাও রেখেছিল কোন একজন ... আমি? আমি আলাদা কোন নাম রাখিনি তার, ডাকি ‘মা’/‘মামণি’ বলে ... সে আমার ছোট্ট মা। কথা বলা এখনো শুরু করেনি। তবে আমার খু-উ-ব ইচ্ছা তার বকবকানি শুনব। আর সেই চেষ্টা চালিয়ে আসছি ছয় মাস ধরেই। সামনে পেলেই ‘মা’ ডাক শিখাতে চেষ্টা করি। অবশ্য অন্য একটা উদ্দেশ্যও আছে আমার - কোনমতে যদি একবার ‘মা’ ডাক শিখে, তবে তা পরপর দু’বার বললেই তো ____ ;) কথা বলার পাশাপাশি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জিনিসটাও শিখবে - সে একদিন ভালবাসতে শিখবে, ভালবাসাতে শিখবে। সে একদিন বড় হবে, অ-নে-ক বড় হবে... পরিপূর্ণ মানুষ হবে।
প্রাসঙ্গিক কিংবা অপ্রাসঙ্গিকঃ কিছুদিন আগে একটা ইংরেজি শব্দের দিকে চোখ গেল - ‘ADULTERATION’। ‘ADULT হওয়া’ আর ‘ADULTERATION’ কি একই প্রসেস? কথাটা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা না হলেও একদম উড়িয়ে দেয়া যায় কি???
কয়েকদিন ধরেই কথাটা আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে - সিনিয়রদের দেখানো পথে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আমরা মানুষেরা আর কী করি? এই যে আমি - জন্মের পর কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন জিনিসটা নিজের ইচ্ছায় করেছি? স্কুলে গেছি, বাবা-মা পাঠিয়েছে বলে ... পড়ালেখা করেছি, বাবা-মা খুশি হয় বলে, অন্যরাও ভাল চোখে দেখে বলে ... স্কুল-কলেজ পার করে ভর্তি হলাম বুয়েটে, ভাল ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয় বলে ... এমনকি সাবজেক্টটাও পছন্দ করলাম অন্যরা করে বলে ... বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ আজ শেষ হওয়ার পথে, মাথায় ঢুকেছে চাকরির চিন্তা। এটাও নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত না। জীবনে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে হলে ইনকাম করতে হয়-এটা শিখেছি বড় ভাইদের দেখে ... কিছুদিন পর হয়তো ভাবব বিয়েশাদি নিয়ে, লোকজনতো তাই করে ... এরপর হয়তো সন্তান-সন্ততি, তাদের মানুষ করা, এমনটাইতো দেখি চারপাশে ... ... ... এককথায় আমরা সেই কাজই করি যা করে গেছেন আমাদের অগ্রজেরা যখন তারা আমাদের বয়সী ছিলেন। শুধু একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। সবসময়ই যদি সিনিয়রদের করা কাজের পুনরাবৃত্তি করে যাই, তবে আমার অবস্থানটা কোথায়??? উত্তর মেলে না...
শেষ বিকেলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে যখন আড়মোড়া ভাঙছিলাম - খেয়াল করলাম বাইরে দারুণ বাতাস। বেশ আরামের। হালকা ঠান্ডা। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে একটু পর। কিন্তু বাতাসটাই ভাল লাগছে। মাঠে গেলে আরো ভাল লাগত। সবি (রুমমেট) কে ঘুম থেকে ডেকে তুললাম। এতে যতক্ষণ দেরী হল, ততক্ষণে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করেছে। সবি এবার ভিজতে চাইল। সামনে পরীক্ষা। বললাম ভিজব না, যদিও কষ্ট হল। বৈশাখের বৃষ্টি, বছর শুরুর বৃষ্টি, আর আমি ভিজব না - কষ্ট হবে না? তবুও সংযত করলাম নিজেকে। বাস্তবতার স্বার্থে হত্যা করলাম মনের ছোট্ট ইচ্ছাকে।
এখন কী করি? নিচে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। ভাবলাম খেয়ে আসি। এগিয়ে চললাম সেদিকে। তিন তলা হতে যেই না নিচে নামলাম, মনটা আবার বেঁকে বসল। বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছেটা আবার জেগে উঠল। ইচ্ছাটাকে দ্বিতীয়বার আর হত্যা করলাম না। একটা রুমে মোবাইল-মানিব্যাগ-জামা রেখে হলের মাঠে ভিজতে নামলাম আমরা দুই রুমমেট। কিন্তু বিধি বাম। এতক্ষণে বৃষ্টি থামতে শুরু করেছে। তবুও মাঠে দাঁড়িয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ। যা ভিজলাম তাতে কিছুই হল না। এরপর যখন জামা পরলাম - সব আবার আগের মতোই স্বাভাবিক, যদিও পরনে বৃষ্টি-ভিজা প্যান্ট।
ভিজা অবস্থায়ই ঝালমুড়ি খেলাম। এরপর কেন্টিনে গেলাম নাস্তা খেতে। খাওয়া শুরু করলাম। এদিকে আমাদের নিয়ে প্রকৃতির খেলা থামে না। বৃষ্টি আবার নামতে শুরু করেছে। আমারাও কি হার মানি! আবার ভিজতে নামলাম। এবার গেলাম ক্যাম্পাসে। চিরচেনা বুয়েট ক্যাম্পাসে। থেমে থেমে ঝরতে থাকা ধারায় ভিজতে ভিজতে রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম। উদাসী মনে চক্কর দিলাম পুরো ক্যাম্পাস। মনটা ভাল হয়ে গেল। বৃষ্টি শেষে সন্তুষ্ট চিত্তে রওনা দিলাম হলের দিকে - রুঢ় বাস্তবতার বিরুদ্ধে বিজয়ী এক মন নিয়ে... ... ...
(
সেই প্রথম যখন বুয়েটে এলাম, অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকতাম সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের দিকে। আর যখন শুনতাম- উনি ৩/২ বা ৪/২ তে পড়েন, ধাঁধিয়ে যেত চোখ - ‘ওম্মা, এত্ত সিনিয়র!’ বড়দের সামনে স্বভাবতই ভদ্র হয়ে যেতাম। কখনোই বলবনা জোর করে ভদ্র হতাম, ভদ্র হতাম তাদের সম্মানে, মন থেকেই হতাম। যেমন- হয়তো বারান্দায় ছুটোছুটি করছিলাম এদিক-ওদিক - এমন সময় পড়ে গেলাম এক ভাইয়ার সামনে। এখন কি করি? পড়িমড়ি করে থামলাম। বিনয়ী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম - ‘কেমন আছেন ভাইয়া?’ ... আবার কোন সময় হয়তো বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমীতে ব্যস্ত - এমন সময় উদয় হলেন একজন। অতএব গুল্লি মারি দুষ্টুমী আর কোলাহলের। ভাইয়ার দিকে চেয়ে হাসি- অপরাধের হাসি। উনার চোখে-মুখেও যেন তির্যক হাসি - ‘ধরে ফেলেছি, ধরে ফেলেছি’ ভাব।
ভাবতেই কেমন অবাক লাগে- আজ আমি সেই ভাইয়াদের দলে। আজ আমি ৪/২ তে। জানিনা জুনিয়ররা কীভাবে দেখে আমায়। তবে তাদের দেয়া ফ্লোর বিদায়, অমুক বিদায়, তমুক বিদায় আমাকে কেবলই মনে করিয়ে দেয় - বুয়েট লাইফ প্রায় শেষ। শেষ সময়টায় নস্টালজিয়াকে এড়াতে পারিনা অনেকের মতো আমিও। মনে পড়ে টুকরো-টুকরো অনেক ঘটনা, টুকরো-টুকরো স্মৃতি। স্মৃতি হাতড়িয়ে খুঁজে বেড়াই চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান। মিলাতে চেষ্টা করি জীবনের জাবেদা। কী করতে পারলাম আর কী পারলাম না- এ হিসাবের ডেবিট-ক্রেডিট মিলেনা কিছুতেই। না পারার দিকটাই এগিয়ে, বড্ড বেশি এগিয়ে। এটুকু জীবনে সবচেয়ে বড় সাফল্য যদি হয় বুয়েটে চান্স পাওয়া, ব্যর্থতাটাও থাকবে তার পাশেই- রেজাল্ট যে ভাল না। রেজাল্টের দিকটা ছাড়লেও যেতে পারতাম প্রোগ্রামিং কন্টেস্টের দিকে। যাওয়া হলনা সেদিকেও। পড়াশুনার দিকটাই ছেড়ে দিলাম। খেলাধূলাতো এখনও আছে। তবে সেখানে আমি বরাবরই দ্বাদশ ব্যক্তি (১১ জনের দলে)। আরও বাকি সাংস্কৃতিক দিক- যে দিকটায় একদমই অপাঙতেয় আমি। দুরবস্থার কথা কী আর বলব - ‘হ্রস্ব-উ-কার’ আর ‘উ-কার’ [তুমি আর তোমার] কিংবা ‘এ-কার’ আর ‘য-ফলা+আ-কার’ [নেশা আর ন্যাকা] এসবের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলি এখনও। হয়তো উল্লেখযোগ্য নয়- তবুও না পারার মিছিলে আরও যোগ দেয় নারী। মিছিলের শ্লোগাণে শ্লোগাণে আত্মবিশ্বাসের ভীতখানিও কেঁপে উঠে কিছুটা।
তবুও আত্মবিশ্বাসের সাথে এটুকু বলতে পারি- ভালকে ভাল আর খারাপকে খারাপ বলতে পারার মনটাকে ধরে রাখতে পেরেছি। এখনও বন্ধুর সুখে হাসতে পারি, কাঁদতে পারি তার দুঃখে। কারো কোন ভাল করতে পারলে এখনও শান্তি পাই মনে [এজন্য বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন)-এর কাছে যার পর নাই কৃতজ্ঞ]। এখনও আমি বন্ধুর সাথে লক্ষ্যহীন ম্যারাথন আড্ডা দিতে পারি, হাসতে পারি প্রাণ খুলে কিংবা অসংকোচ ভিজতে পারি বৃষ্টি এলে ... ... ... এখনও আমি স্বপ্ন দেখতে পারি।