Sunday, November 14, 2010

স্বনির্ভর হওয়ার গল্প

এই লিঙ্কটা (http://www.buet.ac.bd/?page_id=2506 অথবা http://www.buet.ac.bd/cse/news/news.php?newsid=51) দেখেছেন? বুয়েটের অসাধারণ প্রতিভাবান দুই ছাত্র গুগলে চাকরি পেয়েছে। তাঁদের এ সাফল্যে আমি ও আমরা সবাই মুগ্ধ। ভালো লাগে এরকম সাফল্যের কথা শুনলে। পুরো বুয়েট এ নিয়ে গর্বিত। গর্বিত হওয়ার মতোই ব্যাপার। তাঁদের একজনকে আমি চিনি, অন্যজনের কথা লোকমুখে শুনেছি। এমন প্রতিভার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই বিনম্র চিত্তে।

অবাক হই যখন দেখি বুয়েটের ওয়েবসাইটেও এমন সাফল্যের কথা আসে! সব সময় দেখে এসেছি পাশ করে যাওয়া শিক্ষার্থীদের তেমন কোন খোঁজই রাখে না বুয়েট, সেখানে বুয়েটের ওয়েবসাইটে এমন খবর দেখে আশান্বিত হই।

আপনাদের আরো কিছু আশার খবর শুনাই। আমার কয়েকজন ক্লাসমেট সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করেছিল কয়েক বছর আগে, সেখানে এখন বুয়েটসহ আরও কিছু ভাল বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাশ করা শিক্ষার্থী চাকরি করছে। তাঁদের আর্থিক অবস্থার খবর বলতে পারবো না, তবে তাঁদের কথা আমি গর্ব করে বলি মানুষের কাছে। কয়েকজন খুব-পরিচিত জুনিয়র বাংলায় প্রযুক্তি ফোরাম খুলেছে, তাঁদের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কয়েকজন সিনিয়র / ব্যাচমেট / জুনিয়র কে চিনি যাঁরা অন্য কোম্পানির গোলামী না করে ফ্রিল্যান্সিং করছে; স্বাধীনচেতা মানসিকতাকে সালাম জানাই। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন ব্যাচমেট মিলে কনসালটেন্সী ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে কাজ করে যাচ্ছে দেশের কিছু শিল্প-কারখানাকে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত করতে। আর্কিটেকচারের এক আপু আরো কিছু সমমনা মানুষকে নিয়ে নিজস্ব ফার্ম দিতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। শ্রদ্ধা জানাই স্বনির্ভর হওয়ার এমন সব প্রচেষ্টাকে। আমি নিশ্চিত, বুয়েট সম্বন্ধে যদি কিছু খোঁজ-খবর রাখেন, এরকম আর অসংখ্য ঘটনা আপনিও জানেন।

হয়তো লক্ষ্য করেছেন - আমি এমন কোন উদাহরণ দেইনি যারা বাংলাদেশের অন্যতম মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে (জিপি কিংবা ব্যাট অথবা ভাল বেতন দেয়া সফটওয়্যার কোম্পানি যাই হোক না কেন) মোটা অঙ্কের বেতনে চাকুরি করেন। বাইরের কোম্পানির জন্য কাজ করার চেয়ে, নিজের দেশে নিজে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করাকে আমি অনেক বেশি সম্মানের চোখে দেখি। দয়া করে কেউ এমন ভাববেন না যেন, আমি চাকরি করাকে অসম্মান করি; আমি বরং স্বাধীনসত্তাকে বেশি সম্মান করি।

আপনার কি মনে হয় না - এমন সাফল্যের গল্পগুলোও বুয়েটের ওয়েবসাইটে থাকা উচিত? হয়তো বলবেন - এমন ঘটনা এত বেশি যে এগুলো ডাল-ভাতের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু তারপরেও আমি বলি - নীতিগতভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত চাকুরি করার চেয়ে স্বনির্ভর হওয়াকে বেশি উসাহিত করা। বিশ্বের সবচেয়ে ভাল সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করাও শেষ পর্যন্ত একটা চাকরি। তাই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে (বিশেষ করে সে বিশ্ববিদ্যালয় যখন সরকারি অর্থে পরিচালিত) স্বনির্ভর হওয়ার ডাল-ভাত গল্পগুলোই বেশি প্রত্যাশা করি, সেখানে মৌলিক গবেষণার সাফল্যগুলো বেশি প্রত্যাশা করি। নীতিগতভাবে তাই হওয়া উচিত নয় কি? তবে কি আমাদের নীতির জায়াগাটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে? আমরা হয়তো এ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত নই। L

3 comments:

যাযাবর said...

দেশের কেউ-সে যেই-ই হোক না কেনো- পজেটিভ কিছু করলে এত্ত ভালো লাগে!

আলোর ছটা said...

@ফারজানা মাহবুবাঃ হুমম, গর্বে বুক ভরে যায় :)

সংশপ্তক said...

আপনার ব্লগে আসার নিমন্ত্রণ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পূর্বশর্ত আত্মার পুর্ন স্বাধীনতা, সুখ এবং দুঃখের সার্বভৌমত্ব এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকারের ক্ষমতা।
চাঁদের আলোর বদলে নক্ষত্রের আলোর ছটা আপনার জীবন উদ্ভাসিত হোক এই শুভ কামনায়।

- অরুন চৌধুরী