“: সেজদা, সন্ধ্যাতো হইল... কিছু খাইবেন?
: পাউরুটি আছে?
: পাউরুটি খাইবেন? (একটু চিন্তা করে) আছে। কেমনে খাবেন? কলা দিয়া? নাকি দুধ দিয়া ভিজাইয়া?
: কলা দিয়াই দাও।
... ... এরপর... আসলে এর অনেকক্ষণ পর সে আসল- কলা আর পাউরুটি নিয়ে। খাওয়া হল। খাওয়ার পর-
: (আমতা-আমতা স্বরে) আপনেরে একটা মিছা কথা কইছি...
: কি? এখন নিচের দোকান থেকে পাউরুটি কিনে আনলা?
: আয়-হায়! (মাথায় হাত) আপনি বুঝলেন কেমনে? (বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল অল্পক্ষণ, এরপর দ্রুত বলে যেতে লাগল)... তহন পাউরুটি নাই- এইডা কই নাই কেন জানেন? কইলে যদি আপনে কন- খাইবেন না!”
“: আইচ্ছা, আমি দুষ্টামী করি দেইখখা কি আপনে মাইন্ড করেন? দেহেন, আমি কইলাম হগলের লগে দুষ্টামী করি না । এমনকি ‘অমুক’দাদার লগেও না! খালি আপনের লগে ইকটু-আট্টু।”
“: মাসি, আমি কইলাম কারুর বিয়াতে যাইনা। কুনো অনুষ্ঠানেও যাইনা। তয় সেজদার বিয়াতে কইলাম যামু। আমারে কইয়েন কিন্তুক…”
উপরের কোন কথায় কি ভালবাসার কোন কমতি আছে? আমি দেখি না। যদি কোন কমতি দেখা যায়, তবে সেটা আমার লেখার অক্ষমতা... বাস্তবে কখনোই ভালবাসার কোন ঘাটতি চোখে পড়েনি।
ও হ্যাঁ, ভাল কথা... চরিত্রগুলোর পরিচয় দেয়া হয়নি এখনো। ওই যে ‘সেজদা’- সেটা এই অধম ‘আমি’। ছোট্ট মামাত-খালাত ভাই বোনেরা এ নামেই ডাকে আমায়। অবস্থা এমন যে - তাদের বন্ধু-বান্ধবীরাও আজকাল এ নামেই ডাকে। আরে!, আমি সবার ভাই(!) হতে যাব কোন দুঃখে! :P আর ওই যে ‘মাসি’ - আমি তার অবাধ্য সন্তান - আমার মা।
আর এত্তসব কথা যার- সে ‘বিভা’। আমার মাসির বাসার কাজের মেয়ে। এই মাসির বাসায় আমি প্রায়ই যাই- কারণে-অকারণে। বড় মাসতুত বোনটাকে খোঁচাতে খুবই ভাল লাগে আমার। আমার পিছনেও লেগে থাকে সে! শুধু সে না... বাসার সবাই। সমপর্কটা তাই বরাবরই ভাল। কিছুদিন আগে অসুস্থ ছিলাম। তাই ওঠে গেছি মাসির বাসায়। ভাল ভাল খাবার... আদর-যত্ন...বুঝতেই পারছেন! মাসি থাকে ঢাকার বাইরে, চট্টগ্রামে- চাকরির কারণে। এদিকে বাসার দেখভালের পুরু দায়িত্বটাই থাকে বিভার উপরে। মেয়েটা কী সুন্দর করেই না বাসা সামলায়! মাসতুত বোন দুটি যদি কোন কারণে- বিশেষ করে খাওয়া আর পড়া নিয়ে অবুঝের মতো আচরণ করে, সে কী চমৎকার করেই না বুঝায় তাদের! কখনো যুক্তি দিয়ে কখনোবা দার্শণিকের মত কথা দিয়ে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রই।
মাসির বাসায় একটা এক্সট্রা মোবাইলে আছে - সিটিসেল। খুবই পুরানো মডেল। ঠিকমত চার্জও থাকেনা। সারাদিন চার্জ দিতে হয়। তবুও সেটটা আছে। শুধু আছে না, বহাল তবিয়তে আছে। কয়েকদিন আগে পুনরায় রেজিস্ত্রেশনও করা হয়েছে। আমার মেসোর আবার সব কিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি কি না... বাসায় আরো দুই-দুইটা মোবাইল থাকার পরেও যদি কখনো এমন হয় যে- কেউ বাসায় নাই, তখন কি হবে? হায় হায়! তখন কি হবে?? সুতরাং বাসায় তো একটা এক্সট্রা মোবাইল রাখতেই হয়! চুপি চুপি আরেকটা কথা বলে রাখি- এখন ওই বাসায় টিএন্ডটি লাইনও আছে। যাই হোক, ওই মোবাইলটা এখন অনেকটা বিভার হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে- ওই মোবাইলে কল আসলে কে করল সেটা না দেখেই মেসো সজোরে চিৎকার দেয় - ‘অই বিভা... তোর ফো---ন’। কিংবা কখনো যদি ওই সেটটা খুঁজতে হয়, সবাই বলে- ‘বিভার মোবাইলটা কোথায়?’ ওই সেটে যে কয়েকটা কল আসে, সেগুলো বিভারই।
একদিন সন্ধ্যায় বিভা আমাকে বলছে-
“: জানেন সেজদা, আজকে না আমার মনডা খুবঐ ভালা
: (তার চোখের ঝিলিক দেখে ভাল লাগে) কী এমন ঘটল আজ - শুনি।
: আইজকা আমার বইনপুতে ফোন করছিল। বহুদিন বাদে আইজ কথা হইল হের লগে!
: তাহলেতো তোমার মন খুবই ভাল!
: হ! ... আরে, হের লাইগগাই তো আজকা রিক্সাওলারেও কিছু কইলাম না।
: রিক্সাওলা আবার কি করল? (কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি)
: আর কইয়েন না। বাইরে গেছিলাম একটা কামে। বসায় তাড়াতাড়ি ফেরত আওন দরকার। কোন রিক্সা আইয়ে না। হেশে এক বান্দরের রিক্সায় উঠছি। হের মুখ যে এত্ত খারাপ! (চেহারায় ঘৃণার ছাপ স্পষ্ট) কী কমু সেজদা! হারাডা রাস্তা খারাপ খারাপ কথা কইতে কইতে আইছে। নামুনের সময় ভারা লওনের পরে কয় কি জানেন? ‘আবার দেখা হইব!’ হু! (ভেংচি কাটে সে)
: (তার বলার ঢং দেখে আমি হাসি)
: হাইসেন না... হাইসেন না... মেজাজডা আমার এমুন খারাপ হইছিল! অন্যদিন হইলে আমি হেরে জুতা দিয়া মারতাম। খালি মনডা ভালা আছিল বইলা...”
কয়েকদিন পরের কথা-
“: জানেন সেজদা, আজকা না আমার মনডা খুবঐ খারাপ!
: কেন? আজকে আবার কী ঘটল? (অজানা আশংকার ঘন্টা বাজে মনে)
: আইজকা আমার ঐ ভাই ফোন করছিল।
: কোন ভাই?
: ওই যে ছোডবেলায় যেয় হারাইয়া গেছিল।
: তাইলেতো তোমার মন ভাল থাকার কথা!
: আর ভালা... (দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে) জানেন ফোন কইরা কি কয়?
: কি কয়?
: হেয় ফোন করছে... আমি জিগাই কেমন আছস? আর হেয় কয় কি জানেন? তর কাছে ২০ হাজার টাহা হইব? (কথা বলতে বলতে আস্তে আস্তে রেগে যাচ্ছে সে) আরে! এত্তদিন পরে ফোন করছস - জিগাবি তো কেমুন আছি! না, হেয় কয় টাহা দে! (মেজাজ এখন চরমে)
: এত টাকা তোমার কাছে চায় কেন?
: আর কইয়েন না... বাবারে টাহা পাডাইতো... বারির হগলে মনে করে আমি টাহার গাছ! যার যহন টাহা লাগে খালি আমার কাছে চায়। (অভিনয় করে সুরে সুরে বলতে শুরু করে) অই বিভা আমাগ ঘরটা ঠিক করুম- দশ হাজার টাহা দিস ... ক্ষেতে ফসল করুম- কিছু টাহা না অইলেঐ না... মাসি, আমারে জুতা দিবা না?... এক দুলাভাই আছে- হেয় হগলেরে ধার দেয়, হেয়ও কয়- কষ্টে আছি, কিছু টাহা পাঠাইসতো... ... আর না দিলেঐ ভালা না আমি।
: (আমি চুপ করে চেয়ে থাকি। কোন শব্দ খুঁজে পাইনা)
: আবার দেহেন, জীবনে একদিন আমার খুঁজও লয় না। আমি কেমনে থাহি না থাহি কিচ্ছু জিগায় না। (দুঃখ-ভরা অভিমানী কন্ঠে) ছোডবেলা থেইক্কা মাইনষের বাড়ি বাড়ি কাম কইরা খাই। কতদিন না খাইয়াও থাকছি। বড় ভাই একবার কয়ও নাই যে- আমার বাড়িত খা! (কথা বলতে বলতে সে আবার রেগে যেতে থাকে) আর টাহা চাওনের বেলায় আমার কাছে...
: (তার গলার ঝাঁঝ আমাকেও ছুঁয়ে যায় । আমি এখনও কথা বলতে পারিনা। বিভা আপন মনে বলতে থাকে)
: ভাবছিলাম ছোডডা ভালা হইব... নাহ, হেয়ও! (রাগ এবার বিত্রৃষ্ণার রূপ নেয়) ধুর! এইতানের লগে সম্পর্কঐ রাহুম না। এইতানেরা জীবনে আমারে না কোনদিন দেখছিল, না কোনদিন দেখব।... হেগো সম্পর্ক ধুইয়া কি পানি খাইমু! ”
এত ভালবাসা যার মনে- সে ভালবাসা পায়না। তার আটপৌড়ে ভালবাসা ঠুঁকরে মরে পয়সার কাছে... লোভের কাছে... অমনুষ্যত্যের কাছে...
2 comments:
khub bhalo laglo re. Onake kokhono jodi help kora lage amake dole nish.
rajputro>> jani... e dhoroner kaje toke sobsomoy pashe pabo.
Post a Comment