মোল্লার দৌড় নাকি মসজিদ পর্যন্ত। আসলেই কি তাই? শাহবাগ - যুদ্ধাপরাধীর বিচার - জামায়াতের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি - মাহমুদুর চুদুরবুদুরদের মিথ্যাচার – হাটহাজারীতে গুজব থেকে সহিংস তান্ডব - হেফাজতে ইসলামীর রাতারাতি জনপ্রিয়তা – রামু-সিলেটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা - ব্লগাবরদের উপর ইসলামী উগ্রবাদী আর আওয়ামী সরকারের উভমূখী খড়গ – ব্লগিং আর নাস্তিকতার সমার্থক বনে যাওয়া – এত কিছুর পরেও কি মোল্লার দৌড় কেবল মসজিদ পর্যন্ত থাকে? আমরা কি আরেকটু সহনশীল হয়ে সভ্যতার পরিচয় দিতে পারি না? অবাক হয়ে ভাবি, আমাদের মতো পশ্চাৎপদশীল দেশগুলোতে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হলেও, প্রথম সারির দেশগুলোতে তা বলতে গেলে প্রায় নেই-ই কেন? আমাদের এখানে এত-এত অপরাধ হলেও সেসব দেশে অপরাধের মাত্রা এত কম কেন? এই যে সরলীকরণ করলাম – “উন্নত দেশে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কম” – এটা কি আসলেই ঠিক? ধর্ম আর আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির মধ্যে আসলেই কি কোন সম্পর্ক আছে? ধার্মিকদের একটা সাধারণ ধারণা হলো, ধার্মিকতা বাড়লে আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে বাধ্য, যদিও আমরা ধারণা বরং উল্টোটা। সন্দেহ হতো, কয়টা দেশ সম্বন্ধেই বা জানি আমি, এ হয়তো আমার পক্ষপাতমূলক চিন্তার ফলাফল। সন্দেহ দূর করার জন্য, প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য এদিক-সেদিক ঢুঁ মারতাম প্রায়ই। শেষ পর্যন্ত পেয়েছি প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার এক পদ্ধতি।
ডাটা এনালাইসিস আমার একাডেমিক ক্যারিয়ারের একটা অংশ। আমি ভীষণ মজা পাই যখন বাস্তব কোন ঘটনা ডাটা এনালাইসিসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারি। কেবল কিছু সংখ্যা বা উপাত্ত থেকে লুকায়িত সত্য বের করা গোয়েন্দা কাহিনীর রহস্য উদঘাটনের মতোই মজাদার। যেমন ধরুন – মানুষের উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে তার ওজন বাড়বে। কি হারে বাড়বে তা বের করা যাবে লিনিয়ার রিগ্রেশন (Linear
Regression) নামের এ টেকনিক দিয়ে। এ টেকনিক প্রয়োগ করে এক ধরনের ডাটার সাথে আরেক ধরনের ডাটার সরলরৈখিক সম্পর্ক বের করা যায়। নিচের গ্রাফটার দিকে তাকান। কতগুলো কালো ফোঁটা (ডাটা) পর্যবেক্ষণ করে লাল সরলরেখাটা আঁকা হয়েছে লিনিয়ার রিগ্রেশন টেকনিক প্রয়োগ করে। দেখুন, সরলরেখাটা বাম থেকে ডানে (অর্থাৎ আনুভূমিক-অক্ষ বরাবর উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে) ধীরে ধীরে উপরের দিকে ওঠেছে, অর্থাৎ উলম্ব-অক্ষ বরাবর ওজন বেড়েছে।
চিত্র-২) ওজন বনাম উচ্চতার গ্রাফ। উইকিপিডিয়ার Linear Regression এর পেজ থেকে নেয়া কাল্পনিক ডাটার উপর ভিত্তি করে গ্রাফটি আঁকা। |
এই প্যারাগ্রাফটাতে সামান্য গণিত, অবশ্যই সাধারণ বাংলায় ব্যাখ্যা সহ। লিনিয়ার রিগ্রেশন টেকনিক টেকনিক অনুসারে, ওজন = ৬১.৩ x উচ্চতা – ৩৯। উচ্চতাকে গুণ করা হয়েছে ৬১.৩ দিয়ে (ঢাল = ৬১.৩), যার মানে হলো- প্রতি ১ মিটার উচ্চতা বাড়লে ৬১.৩ কেজি ওজন বাড়ে।
আমি বের করতে চাই – ধার্মিকতার সাথে আইনশৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির কোন সম্পর্ক আছে কিনা। একারণে, আনুভূমিক-অক্ষ বরাবর ধার্মিকতার সূচক ও উলম্ব-অক্ষ বরাবর আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির সূচক বসাবো। লিনিয়ার রিগ্রেশন লাইন যদি বাম থেকে ডানে ধীরে উপরে উঠে, তাহলে বলা যাবে – ধার্মিকতা বাড়ার সাথে সাথে আইনশৃঙ্ক্ষলার উন্নতি হতে দেখা যায়। আর বাম থেকে ডানে নিচে নামলে বলা যাবে - ধার্মিকতা বাড়ার সাথে সাথে আইনশৃঙ্ক্ষলার অবনতি হতে দেখা যায়।
সমস্যা হলো – ধার্মিকতা আর আইনশৃঙ্ক্ষলা কোনটাইতো আর যন্ত্র দিয়ে মাপা যায় না। এই ব্যাপারে সাহায্য নিতে হয়েছে কিছু জরিপের। প্রথমতঃ জনমত জরিপের জন্য বিখ্যাত Gallup নামের এক বিখ্যাত কোম্পানি ২০০৯ সালে সারা বিশ্বে একটা জরিপ চালিয়েছিল। বিষয় – “ধর্ম কি আপনার দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ?” উত্তর ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘জানিনা’ কিংবা ‘বলবো না’ হতে পারে। বুঝাই যাচ্ছে – এখানে একজন মানুষ কোন্ ধর্মে বিশ্বাসী তা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনে ঠিকমতো ধর্ম পালন করে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। একেই ‘ধার্মিকতা’ বলছি এখানে। জানি এটাই ধার্মিকতা মাপার জন্য এটা সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি নয়, তবে কার্যকর পদ্ধতি বলতে হবে। প্রশ্নের সহজবোধ্যতার কারণে সকলের পক্ষে উত্তর দেয়া সহজ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের উত্তরের মধ্যে গুণগত পার্থক্যও থাকে কম। একটা দেশের কতভাগ মানুষের কাছে দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ তা থেকে একটা দেশের মানুষের ধার্মিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এরপর আসা যাক, আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির দিকে। World Justice Project বিশ্বের অনেকগুলো দেশের আইন-শৃঙ্ক্ষলার সূচক প্রকাশ করেছে ৮ টা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। ৮টা ফ্যাক্টরে যে দেশের গড় সূচক বেশি, সে দেশের আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি ভাল তা বলা যায়।
ডাটাতো পাওয়া গেল, এখন এনালাইসিসের পালা। এ ডাটা নিয়ে লিনিয়ার রিগ্রেশন করলে নিচের গ্রাফের লাল সরলরৈখিক লাইনটি পাওয়া যায়। কেবল একবার চোখ বুলান গ্রাফটিতে - দেখুন, লাল লাইনটি বাম থেকে ডানে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন যে, ধার্মিকতা বাড়ার সাথে সাথে আইনশৃঙ্ক্ষলার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে (ব্যাখ্যাত আগেই দিয়েছি)।
চিত্র-৩) আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতি বনাম ধার্মিকতার গ্রাফ। কাল্পনিক নয়, বাস্তব ডাটা প্রয়োগ করে গ্রাফটি আঁকা হয়েছে। প্রতিটা দেশের প্রধান ধর্মও চিহ্নিত করা আছে। |
আরো একবার সহজ গণিত চর্চা করি। এখানে যে সূত্রটি পাওয়া যায় তা হলো, আইন-শৃঙ্ক্ষলার হার = - ০.৩৬ x ধার্মিকতার হার + ৮২.১০। এখানে ধার্মিকতাকে গুণ করা হয়েছে -০.৩৬ দিয়ে, অর্থাৎ, সাধারণভাবে ধার্মিকতার হার ১% বাড়লে আইন-শৃঙ্ক্ষলার হার ০.৩৬% খারাপ হতে দেখা যায়। যারা পরিসংখ্যান সম্বন্ধে জ্ঞান রাখেন, তাদের জন্য বলছি – এই হার নির্ণয়ের P-value <
7.31e-14। অন্যদের জন্য সহজ ভাষায় বলছি- যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সাথে এই হার নির্ণয় করা হয়েছে।
এ ধরনের এনালাইসিসের ভুল-ভাল ব্যাখ্যা অহরহই
পাওয়া যায়। তাই বুঝার সুবিধার্থে বলছি - পরিসংখ্যানে Correlation আর Causation নামে দুইটা টার্ম আছে। এই এনালাইসিস ধার্মিকতা আর আইন-শৃঙ্ক্ষলার মধ্যে সম্পর্ক (correlation) প্রকাশ করে, কোনভাবেই কারণ (Causation) প্রকাশ করে না। অর্থাৎ, এই এনালাইসিস বলে:
•
যেখানে ধার্মিকতা বেশি, সেখানে আইন-শৃঙ্ক্ষলা ভাল থাকতে দেখা যায়।
•
যেখানে আইন-শৃঙ্ক্ষলা ভাল, সেখানে ধার্মিকতা কম থাকতে দেখা যায়।
এই এনালাইসিস কোনভাবেই যা দাবি করে না (খেয়াল করে, এসব দাবিকে মিথ্যাও বলে না ):
•
ধর্ম আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য দায়ী।
•
আইন-শৃঙ্ক্ষলা ব্যবস্থা ধার্মিকতার অবনতির জন্য দায়ী।
এই এনালাইসিস একটা সাধারণ ধারণা (Null Hypothesis) কে বাতিল করে দেয় – “দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের গুরুত্ব বাড়লে অপরাধ-প্রবণতা কমে, আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।”
যেহেতু ধর্মবিশ্বাস খুব স্পর্শকাতর ব্যাপার, তাই আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই এনালাইসিসকে আস্তিকগণ ধর্মের প্রতি আঘাত হিসেবে না নিয়ে এর পরিসাংখ্যনিক ব্যাখ্যা বুঝার চেষ্টা করুন এবং নাস্তিকগণ একে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে “ধর্ম অপরাধ-প্রবণতা সৃষ্টি করে” এ ধরনের উপসংহারে পৌঁছানো থেকে বিরত থাকুন।
এবার চলুন এই ফলাফলের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কী কী হতে পারে দেখি।
১) প্রথম ব্যাখ্যাটা অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার
সাথে সংযুক্ত। মানুষ যখন অসহায় বোধ করে, তখন ধর্মের কথা বেশি মনে করে। অনুন্নত
দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। মানুষ প্রতিনিয়ত যুদ্ধ
করে দু-মুঠো খাবার যোগাড়ের জন্য। কেবল হাভাতে দিন-আনি-দিন-খাই টাইপের মানুষের জন্য
না, বরং মধ্যবিত্তদের জন্যও একই ধরনের ব্যাখ্যা প্রযোজ্য। কেউ একটুখানি অসুস্থ হয়ে
হাসপাতালে গেলেই বুঝা যায় তারা কতখানি অসহায়। সেই সাথে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের
কারণে যোগ্য-মেধাবী-ভাল মানুষটি সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগে। এসব অনিশ্চয়তার মাঝে তাই
সবার একমাত্র সম্বল হয়ে দাঁড়ায় আল্লাহ-খোদা-ভগবান-ঈশ্বর, কেবল যার কাছে
ন্যায়বিচারের ভরসাখানি এখনো অটুট। আল্লাহ অপরাধীর শাস্তি দিবেন – এই ভরসায় সঁপে
দেন নিজেকে। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোতে উপার্জনের সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট, আইনের সঠিক
প্রয়োগের কারণে নিজের প্রাপ্য বুঝে পেতে সমস্যা হয় না, নিরাপত্তার চিন্তা নেই, তাই গৌণ কারণে আত্মসমর্পণের দরকার হয় না।
২) পরবর্তী ব্যাখ্যাটা ধার্মিকদের মানতে খুবই
কষ্ট হওয়ার কথা। ধর্ম আমাদের ভাল পথে থাকার কথা বললেও, কোন ধর্মই আসলে সত্যিকারের
সহনশীল হতে শিখায় না, শিখায় না অন্য কোন মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। বরং নিজের
ধর্ম বাদে অন্য সকল ধর্ম মিথ্যা, সেই ধর্মের মানুষরা কাফের, অস্পৃশ্য ছোট জাত –
এমন বাণী প্রচার করে সগর্বে। কাফেরদের হত্যা করাতো বড় সওয়াবের কাজ! অনেকেই হয়তো
এখানে বলার চেষ্টা করবেন যে, এটা ধর্মের ব্যাখ্যার ভুল। কোন ব্যাখ্যা ভুল নাকি
সঠিক সেটা এ আলোচনার বাইরের তর্কের বিষয়, তবে এমন ধারণা যে অনেকেই পোষণ করেন, সেটা
ঘটমান সত্য। আজকাল অনেক পড়ালেখা করা মানুষকেই দেখি, ধর্ম নিয়ে কথা উঠলেই উত্তেজিত
হয়ে যেতে, অসহিষ্ণু হয়ে যেতে, অকম্পিত কন্ঠে বলে, নাস্তিকদের বেঁচে থাকার কোন
অধিকার নেই। ধর্মানুভূতিতে আঘাত বিষয়টা অসহিষ্ণুতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এর সাথে যোগ
করুন নারীকে অর্ধেক মানুষ বা পুরুষের মনোরঞ্জনের বাহন হিসেবে দেখার কথা বা ছোট-জাতের
গায়ে ছোঁয়ার কারণে ব্রাহ্মণের গোসল করার কথা। এভাবে মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ তৈরি
করে দিয়েছে ধর্ম, একজন মানুষকে আরেকজন কর্তৃক দমিত করে রাখার উপায় তৈরি করে দিয়েছে
ধর্ম। এরকম অসহিষ্ণুতা আর অন্যায় আচরণের শিক্ষা আমরা বহন করে বেড়াই প্রতিটা
ক্ষেত্রে। তাই রাজিবদের মারতে আমরা দ্বিধান্বিত হই না, নাদিয়াকে হেফাজতে ইসলামের
বর্বরতার শিকার হতে দেখেও আমাদের বিবেক জাগ্রত হয় না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভাস্কর্য ভেঙ্গে নিজের সংস্কৃতিকে গলা টিপে হত্যা করার হুমকিকেও মনে হয় “ঠিকইতো
আছে, এটাই ধর্মের জন্য লড়াই”। ফলাফল, কিছু মানুষ দিন কাটায় খুন হওয়ার আশংকায়।
৩) তৃতীয় ব্যাখ্যাটি শিক্ষাকেন্দ্রিক। আমাদের যা
শিখানো হয়, তাই শিখি। ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখি ভূত-প্রেত-দেব-দেবী-নবী-রসুলের কথা।
এই গল্পগুলো শুনতে শুনতে এগুলোকেই সত্য বলে ভাবতে থাকি। একটা বড় অংশ তাই
দেব-দেবী-নবী-রসুল তো দূরের কথা, ভূত-প্রেতের বিশ্বাস থেকেও বের হতে পারে না। যেদেশের
শিক্ষা বিজ্ঞান-কেন্দ্রিক, সেখানে এসব মানুষ যা কিছু দেখে তার একটা বিজ্ঞানসম্মত
ব্যাখ্যা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কিছুদিন আগে দেখলাম, ইতিহাসের এক অনলাইন
কোর্সের লেকচার শুরু করা হয়েছে বিবর্তন দিয়ে। যেখানে বিজ্ঞানের এমন বিস্তার থাকবে,
সেখানে অন্ধবিশ্বাসের হার নিশ্চিতভাবেই কমবে।
৪) এর পরের ব্যাখ্যাটা মানসিক। একজন যত বড়
সন্ত্রাসী বা দুর্নীতিবাজই হোক না কেন, সে জানে সে অপরাধ করছে, তার ভিতর অপরাধবোধ
কাজ করবেই। বেশিরভাগ সময়েই হয়তো সেই অপরাধের পিছনে একটা খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে
নিজেকে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করে, তবে মাঝে মাঝে এই অপরাধবোধ নিশ্চয় তাকে দহন করে।
নামাজ বা ধর্মকর্ম হয়তো তাকে সেই দহন থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়।
৫) আমাদের সমাজে দুর্নীতি এমন একটা পর্যায়ে
পৌঁছেছে যে, আমরা আজ আর কাউকে বিশ্বাস করতে চাই না। তবে, কীভাবে কীভাবে যেন
ধার্মিকদের প্রতি সেই অবিশ্বাস বা অশ্রদ্ধার অনুভূতি কাজ করে না। সবাই তাদেরকে বেশ
সম্মান করে। যে যত বেশি কড়া করে ধর্ম করে, সে তত বেশি সম্মান পায়। আর এই সম্মানের
প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে ধর্মের প্রতি অনুরূক্ত হয়ে পড়ে অনেকেই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই
মানুষটি বুঝেই না যে, সে সম্মানের মোহে ধর্ম করছে। একটুখানি অধর্ম হলে সে যত না
অনুতাপ বোধ করে, তার চেয়েও বেশি ভয় করে, লোকে কি বলবে এই ভেবে।
ধর্মাচরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে যারা আদর্শ সমাজ গঠনের
কথা ভাবেন, তাদের জন্য বলি, চলুন না আমরা একটু ভিন্নভাবে ভাবি। আমরা যদি সবার জন্য
কাজের ব্যবস্থা করতে পারতাম, সবার মাঝে বিজ্ঞানচর্চা সৃষ্টির পাশাপাশি মানবিক
গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে পারতাম, এবং সেই সাথে আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি
দূর করতে পারতাম, তাহলে আমাদের ইতিহাস আর ভবিষ্যত দুটোই ভিন্ন হতো, হতো অনেক বেশি
সম্মানের!