ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের দুই বিল্ডিং-এ বসে আছে দুই জন মানুষ- রাজেশ রাও আছে তার ল্যাবে- কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিল্ডিং-এ, আর আন্দ্রে স্টক্কি আছে তার ল্যাবে- ইনস্টিটিউট ফর লার্নিং এন্ড ব্রেইন সায়েন্স বিল্ডিং-এ। দুই জনই মাথায় টুপির মতো একটা কিছু পরে আছে। একেক জনের টুপির বিশেষত্ব একেক রকম।
[ছবি ১: রাজেশ রাও (বামে) ও আন্দ্রে স্টক্কি (ডানে) বসে আছেন নিজ নিজ ল্যাবে।]
রাজেশের মাথার টুপি তার ব্রেইনের কাজকর্মের সিগন্যাল রেকর্ড করে ইইজ(EEG - Electroencephalography) ব্যবহার করে। অন্যদিকে, আন্দ্রের মাথার টুপি তার ব্রেইনে কিছু সিগন্যাল ঢুকায় টিএমএস (TMS - Transcranial Magnetic Stimulation) ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে তার হাতের নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পুরো ব্যাপারটা হলো - রাজেশ হাত নাড়াচড়া করার কথা চিন্তা করবে, সেই হাত নাড়ানোর সিগন্যাল রাজেশের টুপি থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলে যাবে আন্দ্রের টুপিতে, এরপর তা যাবে আন্দ্রের ব্রেইনে যার ফলে আন্দ্রের হাত নড়বে! এক মস্তিষ্ক থেকে আরেক মস্তিষ্কে!
[ছবি ২: এক্সপেরিমেন্ট ডিজাইন]
রাজেশ আর আন্দ্রে দুইজন মিলে ব্রেইন থেকে ব্রেইনে যোগাযোগের মাধ্যমে খেলেছেন এক কম্পিউটার গেম। খেলার নিয়ম হলো - মিসাইল রকেট থেকে একটা শহরকে বাঁচাতে হবে। দস্যুরা আক্রমণ করছে শহরকে, জাহাজ থেকে মিসাইল ছুড়ছে শহরের দিকে। খেলার ছবিটা দেখেন - বাম দিকে আছে শহরটা আর ডানে নিচের দিকে আছে দস্যুদের জাহাজ। একটা কামান আছে মাঝে। মিসাইল ছোড়ার পর তা শহরে আঘাত করার আগেই কামানের গোলা ফায়ার করতে হবে। তাহলেই বেঁচে যাবে শহর। মাঝে মাঝে স্বাভাবিক এরোপ্লেনও দেখতে পারেন আকাশে, তখন কিন্তু কামান ফায়ার করা যাবে না।
[ছবি ৩: কম্পিউটার গেম। গেমের স্ক্রিনে বাম দিকে আছে শহর, ডান দিকে আছে দস্যুদের জাহাজ, আর মাঝে কামান। বামের ছবিতে মিসাইল উড়ে যাচ্ছে শহরের দিকে, আর ডানের ছবিতে মিসাইলটি ধ্বংস করা হয়েছে কামান ফায়ার করে।]
রাজেশ দেখতে পাচ্ছে সব কিছু, কিন্তু তার কাছে কামান নেই। অন্যদিকে আন্দ্রের কাছে কামান আছে, কিন্তু সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে ব্রেইন-থেকে-ব্রেইন ছাড়া যোগাযোগের অন্য কোন উপায়ও নেই। রাজেশ যখন মিসাইল দেখতে পায়, তখন তার ডান হাত নাড়ায়, তার ব্রেইনের এই সংকেত চলে যায় আন্দ্রের ব্রেইনে, তা আন্দ্রের ব্রেইনকে স্টিমুলেট করে, এর ফলে কামানের বাটনের ঠিক উপরে রাখা আন্দ্রের ডান হাতের আঙ্গুল উপর থেকে নিচে জোরে কামানের বাটনে চাপ দেয়। আর কামানের গোলা বাঁচিয়ে দেয় শহরকে। শহরকে বাঁচানোর হার ৯০% এর চেয়েও বেশি। দেখুন নিচের ভিডিওটা -
[ভিডিও ১: এক্সপেরিমেন্টের ভিডিও।]
উল্লেখ্য- ব্রেইন থেকে ব্রেইনে যোগাযোগ এবারই কিন্তু প্রথম নয়। এর আগেও হয়েছে। ইঁদুর থেকে ইঁদুরের ব্রেইনে যোগাযোগ দেখিয়েছেন ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা [২]। এছাড়া মানুষ আর ইঁদুরের ব্রেইন-থেকে-ব্রেইনে যোগাযোগ দেখিয়েছেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা [৩]। তবে, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসররাই প্রথম দেখিয়েছেন মানুষের ব্রেইন-থেকে-ব্রেইনে যোগাযোগ।
মানুষের ব্রেইন-থেকে-ব্রেইনে যোগাযোগের এই পদ্ধতি অনেকটা সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনায় না? অনেকের কাছেই হয়তো এটা বেশ ভয়ংকর একটা ব্যাপার। তবে, চিন্তা করুন না প্যারালাইস্ড্ মানুষের কথা। তাদের এক অংশের ব্রেইন সিগন্যাল নিয়ে যদি অন্য অংশকে কাজ করানো যায়, তাহলে সেই দিন দূরে নয় যেদিন প্যারালাইস্ড্ মানুষটিও ফুটবল খেলতে পারবে!
সূত্র:
১) http://homes.cs.washington.edu/~rao/brain2brain/experiment.html
২) http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/23448946?dopt=Abstract&holding=npg
৩) http://www.plosone.org/article/info:doi/10.1371/journal.pone.0060410